সিত্রাংয়ের আবহেই রাজ্য মেতেছে শ্যামা বন্দনায়। আলোর উৎসবের মধ্যে দিয়ে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করার প্রার্থনা। এই নিয়েই মহাদেবীর আরাধনায় ডুব দিয়েছেন বঙ্গবাসী। কার্তিক অমাবস্যায় যোগিনী পরিবৃতা দেবী দূর করবেন যাবতীয় অশুভ। দেবেন সব শুভ আর আলোর সন্ধান। এমনটাই প্রার্থনা ভক্তদের।
এরাজ্যে বেশ কয়েকটি শক্তিপীঠ আছে। প্রতিটিতেই কালী বন্দনা চলছে সাড়ম্বরে। কারণ, বঙ্গদেশে দেবী কালীই মূল উপাস্য। সমতল থেকে পাহাড় সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে এই ছবি। তার মধ্যে দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারাপীঠের মত স্থানগুলোয় তো ঢল নেমেছে ভক্তদের। কিন্তু, তার বাইরেও আরও শক্তিপীঠ রয়েছে। যেগুলো সতীপীঠ না-হলেও ধারে বা ভারে ভক্তদের থেকে তা কোনও অংশেই কম নয়।
তেমনই একটি শক্তিপীঠ হল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার ডাকাত কালীর পুজো। ভক্তদের কাছে দেবী এখানে পরিচিত 'খেপি মা' নামে। অত্যন্ত জাগ্রত এই শক্তিপীঠ। কথিত আছে কয়েক শতাব্দী আছে এক সময় এখানে ঘন জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে থাকত ডাকাতরা। তারা এই দেবীর পুজো না-করে ডাকাতি করতে বের হত না। বহু চেষ্টা করেও সেই সব ডাকাতদের ধরা যায়নি। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর কৃপাতেই বারেবারে রক্ষা পেয়েছে ডাকাতরা।
তবে, আজ আর সেই ডাকাতরা নেই। তাদের দাপটে সাধারণ গেরস্তদের ভয়ে দিন কাটানোর ঘটনাও অতীত। তবে, ডাকাতদের সেই পুজো আজও আছে। সেই পুজো এখন সাধারণ এলাকাবাসীই করে থাকেন। ডাকাতরা দেবীকে বিপুল পরিমাণ গয়না এই পুজোর দিনে পরিয়ে দিত।
আরও পড়ুন- কালীপুজোতেও দেখা নেই তাদের! কোথায় গেল বাংলার বিখ্যাত শ্যামাপোকা?
আজ সেই সব গয়নার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। যার তালিকায় আছে বড় কানপাশা, সোনার মুকুট, সোনার বাউটি জোড়া, জমকালো নথ থেকে নানা অলংকার। সবমিলিয়ে ৪ কেজি সোনার গয়না, ৫ কেজি রুপোর গয়না। এই সবই ডাকাতদের লুঠ করা গয়না। বর্তমানে যার নিরাপত্তায় থাকে রাজ্য পুলিশ।
দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই বিশেষ দিনটিতে ছুটে আসেন খেপি মায়ের মন্দিরে। দেবীর কাছে নানা প্রার্থনা করেন। মনস্কামনা পূরণ করেন 'খেপি মা'। এমনটাই বিশ্বাস থেকেই অনেকে এই মন্দিরে আসছেন বংশ পরম্পরায়। যার সুবাদে ৪০০ বছরের ডাকাত কালীর পুজো আজ প্রকৃত অর্থেই সর্বজনীন।