“ঢ্যাং কুড়কুড়, ঢ্যাং কুড়াকুড় বাদ্যি বেজেছে”। হ্যাঁ এবারে মহালয়ার আগে থেকেই একেবারে পুজোর ধুম লেগেছে শহর কলকাতায়। আনুষ্ঠানিকভাবে পুজোর বাকি আর মাত্র দিন দুই। ইতিমধ্যে শিয়ালদহ স্টেশনে এসে পৌঁছচ্ছেন ঢাকিরা। ট্রেনের হর্ণ আর ঘোষণার মাঝে অবিরাম বাজিয়ে চলেছেন ঢাক। যদি বায়না করতে আসা কোনো ক্লাব বা পাড়ার চোখে পড়ে যান, তাহলে এ বছরের পুজোর রোজগার পাকাপাকি হয়ে যাবে। তাই যতটা সম্ভব তেড়ে ঢাক বাজিয়ে যান এঁরা।
গ্রাহকের অপেক্ষায়। ছবি: শশী ঘোষ
একটু ভিডিও বা ছবি তুলতে তাঁদের পাশে গেলে ঢাক বাজাতে বাজাতেই জিজ্ঞাসা করছেন, "ঢাকি লাগবে?" পুজোর চারদিনই তাঁদের কাছে সারা বছরের মোটা অঙ্কের রোজগার। ১০ থেকে ২০ হাজারের মধ্যেই তাঁদের সঙ্গে দরদাম করেন অধিকাংশ ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
এ যেন ওয়ার্ম আপ চলছে। ছবি: শশী ঘোষ
পুজোর আমেজকে ভরপুর করে তোলেন ঢাকিরা। গতকালই বীরভুম থেকে শিয়ালদহ এসেছেন তারা। সারাদিন দরদাম বায়না করতেই কেটে যাচ্ছে, রাতে শোয়ার জায়গা হচ্ছে শিয়ালদহ স্টেশনেই। সাইক্লোন তিতলির প্রকোপে হঠাৎ বৃষ্টিতে অসুবিধায় পড়েছেন ঢাকিরা, কারণ হোটেলে থাকার পয়সা নেই। কলকাতার কোন পুজোয় নিজেদের প্রতিভা দেখাতে পারবেন তাও সবাই এখনও জানেন না।
আপাতত শিয়ালদা স্টেশনেই ঘরবাড়ি। ছবি: শশী ঘোষ
ঢাকি কৃষ্ণদাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি প্রতি বছর এ ভাবেই পুজোর সময় কলকাতায় আসেন। তারপর কোনো এক ক্লাব কর্তার সঙ্গে চলে যান তাঁদের পাড়ায়। ঠিকঠাক রাস্তাও চেনেন না কলকাতার। ক্লাবের লোকেরাই আবার শিয়ালদহ স্টেশনে পুজোর পর পাঠিয়ে দেন। এভাবেই কেটেছে ১৪ বছর। নিতাই দাসের মুখেও একই কথা, ২০ বছর ধরে কলকাতায় আসেন রোজগারের আশায়।
এঁদের ছাড়া পুজো ভাবতে পারেন? ছবি: শশী ঘোষ
আগে কদর ছিল। সে কদর এখন বোঝেন ক'জন? পুজোর থিমের খরচের পরে ঢাকির খরচ আর পড়তায় পোষায় না অনেক ক্লাব কর্তাদের। তাই পুজোর সংখ্যা বাড়লেও, ঢাকিদের দর পড়ে গেছে বর্তমানে। এককালীন রোজগার করেন ঢাকিরা এই সময়। বছরের বাকি সময় চাষবাস, দিন মজুরের কাজ করেন তাঁরা।
বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক। ছবি: শশী ঘোষ