Advertisment

যে মূর্তি সরানোয় প্রতিবার নেমেছে ভয়াবহ বিপর্যয়, উত্তরাখণ্ডের রক্ষাকর্ত্রী জাগ্রত দেবী ধারি

দেবীর মাথা ও ধড় আলাদা মন্দিরে পুজো করা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Dhari_Devi

কেদার-বদ্রী তো অনেক গেছেন। চারধামও ঘুরেছেন। কিন্তু, জানেন কি উত্তরাখণ্ডবাসী কেদার-বদ্রী বা চারধাম না। উত্তরাখণ্ডের রক্ষাকর্ত্রী বলে মনে করেন 'ধারি দেবী'কে। যিনি আসলে দেবী দুর্গারই ভিন্ন রূপ। কালিয়াসৌরের ধারি বা ধারো গ্রামে অলকানন্দা নদীর তীরে শ্রীনগর ও রুদ্রপ্রয়াগের মাঝখানে এই দেবীর মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দারা জায়গাটিকে বলেন ডাং চৌরা। এই দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত বলেই বিশ্বাস করেন উত্তরাখণ্ডবাসী। তাঁদের বিশ্বাস, দেবীর পাথরের মূর্তিটি সকালে কুমারী, দুপুরে যুবতী, সন্ধ্যায় বৃদ্ধার রূপ ধারণ করে। এই মন্দিরে কেবলমাত্র দেবীর মাথার পূজা করা হয়। দেবীর ধড়টি পাওয়া যায় রুদ্রপ্রয়াগের কালীমঠে। ওই মঠে দেবীকে 'মৈঠানা' রূপে পুজো করা হয়।

Advertisment

ধারি দেবীকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। তা হল- ধারি দেবীর সাত ভাই ছিল। তাঁদেরকে তিনি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। মন-প্রাণ দিয়ে তাঁদের সেবাও করতেন। কিন্তু, সেই ভাইয়েরাই তাঁকে ভালোবাসত না। কারণ, দেবীর গায়ের রং ছিল কালো। আর, যেদিন ভাইয়েরা জানতে পেরেছিল যে ধারি দেবীর গ্রহদশা ভালো নয়, সেদিন থেকেই বেড়ে গিয়েছিল তাঁদের ঘৃণা। এই জানতে পারার কিছু বছর পর ধারি দেবীর মা ও তাঁর পাঁচ ভাইয়ের হঠাৎই মারা যান। এই ঘটনার পর ধারি দেবীর দুই ভাইয়ের ধারণা হয় যে ধারি দেবীর জন্যই তাঁরা মারা গিয়েছেন। বাকি দুই ভাই তখন ধারি দেবীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষতে শুরু করে।

ধারি দেবীর যখন ১৩ বছর বয়স, সেই সময় দুই ভাই ধারি দেবীর মাথা কেটে মাথা ও দেহটি নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়। সেই মাথা ভেসে এসে পৌঁছয় কালিয়াসৌরের গ্রামে। ঘটনার সময় সকালে নদীতে স্নান করছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি নদীর জলে মাথা ভাসতে ভয়ে স্নান করতে পারছিলেন না। হঠাৎই তিনি দেখতে পান, মাথাটি বলছে যে, 'ভয় পাস না। আমাকে জল থেকে নিয়ে যা। আমি কথা দিচ্ছি যে তুই যেখানে পা দিবি, আমি সিঁড়ি তৈরি করে দেব।' ওই ব্যক্তি ভয়ে সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে দেখেন যে মিথ্যে নয়। তিনি যেখানে পা দিচ্ছেন, সেখানেই সিঁড়ি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এই ভাবে তিনি দেবীর কাটা মাথার কাছে পৌঁছন।

আরও পড়ুন- সবচেয়ে জাগ্রত! ভাঙতে এসে ভয়ে মন্দিরের উন্নয়নে অর্থ দিয়েছেন আফগান, মোগল শাসকরাও

এরপর দেবী নাকি তাঁকে নির্দেশ দেন, 'আমার মাথাটি তুলে কোনও একটি পাথরে স্থাপন কর।' ওই ব্যক্তি সেই নির্দেশ পালন করার পর সেই স্থান দেবী ধারির স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ১৮৮২ সালে স্থানীয় এক রাজা দেবীর মাথাটি সরিয়েছিলেন। তার জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল কেদারনাথ মন্দিরের। তারপরও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ২০১৩ সালের ১৬ জুন। কাহিনিতে অবিশ্বাস করে পাথর বেদী থেকে সরানো হয় ধারি দেবীর মাথা। এই কাজটি করা হয়েছিল ৩৩০ মেগাওয়াটের অলকানন্দা ড্যাম তৈরির জন্য। কিন্তু, তার কয়েক ঘণ্টা পর সাংঘাতিক বন্যা আর ভূমিধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল উত্তরাখণ্ড। তাই এরপর ধারি দেবীকে তাঁর বেদীতেই পুনরায় স্থাপন করে তৈরি করা হয়েছে মন্দির।

Uttarakhand Durga Puja durga
Advertisment