গর্ভাবস্থায় নারীদেহে নতুন প্রাণের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু নানাধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হাই ব্লাড প্রেসার হোক কিংবা সুগার অনেক কিছুই নতুন করে চাগাড় দিয়ে ওঠে। বিশেষত মহামারীর সময় থেকেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। নিয়মিত চেকআপ যেমন সম্ভব হচ্ছে না, তেমনই বাঁধা পড়ছে ঠিকমতো খাবার দাবারের প্রসঙ্গে। ফলোতেই প্রসবপূর্বে মায়েদের শরীর কিন্তু খারাপ হচ্ছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কিন্তু এই রোগগুলির মধ্যে একটি যেটি সঠিক সময়ে চিকিৎসার আয়ত্বে না এলে মা এবং শিশু দুইজনেরই ক্ষতি হতে পারে।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রচুর প্রেগনেন্ট মহিলারা যারা সমান তালে করোনা আক্রান্ত এমন সংখ্যাও প্রচুর। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণের ভয়েই কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে আসতে বারণ করা হয়। তবে ডায়াবেটিসের প্রতিকূল প্রভাবের লক্ষণ কিন্তু বেশ কিছু মায়ের শরীরের মিলেছে।
আসলে ডায়াবেটিসের এই লক্ষণটি কী ?
কল্যান সাত্তারু ( জেনেরাল ম্যানেজার, আব্যত ডায়াবেটিক কেয়ার ) জানিয়েছেন, ডায়াবেটিস মেলিটাস (GDM) ভারতে একটি জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার। এটি মা এবং শিশুর জন্য উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন গ্লুকোজ স্তরের ঝুঁকি এবং গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতা। ভবিষ্যতের গর্ভাবস্থায় জিডিএম-এর উচ্চ ঝুঁকি এবং পরবর্তী জীবনে টাইপ ২ ডায়াবেটিস তথা কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকিও কিন্তু রয়েছে। গ্লাইসেমিক পরিবর্তনশীলতার সঙ্গেই এই ঝুঁকিগুলি বৃদ্ধির কারণে নানান ধরনের শারীরিক অসুবিধে হতে পারে। মহিলাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গ্লুকোজের মাত্রা কার্যকরভাবে পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ। COVID-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য এবং অ্যাক্সেসের চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে এটি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে এর থেকে রেহাই পেতে পারেন প্রেগনেন্ট মহিলারা?
যেহেতু এই করোনা আবহে বেশিরভাগ মায়েরাই বাড়িতে থাকেন কিংবা আছেন তাতে কিন্তু ঝুঁকি একটু কম এবং বেশ নিয়মের মধ্যেই আছেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীর কিন্তু নিয়ম করে এটির মাত্রা নির্ধারণ দরকার। সীমিত ক্লিনিক পরিদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে, ডায়াবেটিসের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নাও হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রার ওঠানামা লক্ষ্য করা যায় না এই কারণেই। তবে এটিতে কিন্তু হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। দরকার পড়লে বাড়িতে মেশিন কিনে হলেও নিয়মিত চেকাপ করুন।
এমনকি যারা টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত তাদের কিন্তু নিয়মিত গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করা দরকার। এই সময় দাঁড়িয়ে যখন এইসব রোগের জন্য হাসপাতালে জায়গা একেবারেই নেই সেই জায়গায় নিজেদেরকেই তৎপর হতে হবে। প্রাথমিক সনাক্তকরণ, দূরবর্তী যত্ন, সামগ্রিক অন্তর্দৃষ্টি এবং ব্যাপক পরিমাপ সক্ষম করে, সেন্সর-ভিত্তিক গ্লুকোজ মনিটরগুলি মা এবং শিশুদের উন্নত স্বাস্থ্যের ফলাফলের জন্য আরও ভাল ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে।
তবে যে বিষয়গুলিতে নজর দিতে হবে যে, সেন্সর ভিত্তিক মনিটর গুলিই কিন্তু সঠিক পরিমাপের নির্দেশনা দেয়। এবং সহজেই ব্যাবহার করা যায়। তার সঙ্গেও যেহেতু ডায়াবেটিসের বিষয় সেই কারণেই খাবার খাওয়ার আগে এবং পরে দুই সময়ই কিন্তু পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
যদিও পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল ব্লাড সুগার (PPBS), ফাস্টিং ব্লাড সুগার এবং HbA1C সহ গ্লুকোজের মাত্রার বেশ কিছু পরিমাপ রয়েছে, তবে এই ব্যবস্থাগুলি নির্দিষ্ট সময়ে বা গড় মাত্রা হিসাবে গ্লুকোজের মাত্রা নির্দেশ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেন্সর-ভিত্তিক গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ ডিভাইসগুলি একটি অনন্য, অত্যাবশ্যক মেট্রিক অফার করে - পরিসরের সময় (TIR), যা রোগীর একটি লক্ষ্য বা প্রস্তাবিত গ্লুকোজ পরিসরে ব্যয় করা সময় পরিমাপ করে। এটি গ্লুকোজের মাত্রার পরিবর্তনশীলতার একটি প্রত্যক্ষ পরিমাপ অফার করে, যা চিকিত্সকদের চিকিত্সা পরিকল্পনা ব্যক্তিগতকৃত করতে এবং রোগীদের পরিসরে আরও বেশি সময় ব্যয় করতে সক্ষম করে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য, TIR পরিমাণগতভাবে গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা পরিমাপ করতে পারে, এইভাবে পরিবর্তনশীলতা কমাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ সক্ষম করে এবং এইভাবে মা এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের ফলাফল উন্নত করে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন