করোনা মহামারীর অন্যতম সংকেত এবং পরবর্তী ধাপ বলতে কিন্তু সবরকম উপসর্গের সঙ্গেই ঘ্রাণ এবং স্বাদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয় টিকেও তুলে ধরে হয়। এর আগেও যখন মানুষ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন তারা এটাই বোঝার চেষ্টা করছিলেন, যে আদৌ স্বাদ এবং গন্ধ হ্রাস পাচ্ছে কিনা তবেই সেটিকে অশনি সংকেত হিসেবে ধরে নিচ্ছিলেন মানুষ। তবে সমস্যা এখনও শেষ হয়নি। প্রচুর মানুষ এমন আছেন যারা করোনা আক্রান্ত হলেই প্রথম ভাগেই যে গন্ধ এবং শ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে সেটি কিন্তু একেবারেই নয়। বরং, এর পরবর্তীতেও কিন্তু মানুষ অনেক রকম সমস্যার মধ্যে ঘ্রাণ না ফেরার বিষয়টিকেও উল্লেখ করছেন।
চিকিৎসকরা কী জানাচ্ছেন এই বিষয়ে?
তাদের মতামত অনুযায়ী প্রচুর মানুষ যারা বেশ অনেক মাস আগেও করোনা মহামারী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যেও এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেদের স্বাদ এবং গন্ধ ফিরে পায়নি। এবং বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যারা ওমিক্রন থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা কিন্তু সময়ে বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে ঘ্রাণ না ফেরার সমস্যায় যথেষ্ট ভুগছেন। এবং এটি বেশ অস্বাভাবিক একটি বিষয় বলেই গণ্য করেছেন তারা।
গবেষণা থেকে কী জানা যাচ্ছে?
সুইডেনের একদল গবেষক জানাচ্ছেন, এইসময় দাঁড়িয়ে মানুষের ঘ্রাণ হ্রাস পাওয়া স্বাভাবিক তবে বেশিদিন সেটি না ফিরলেই কিন্তু গন্ডগোল। এবং এই সমস্যা আসলেই হতে পারে মানুষের হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য। বিশেষ করে মানুষের হ্যাপি হরমোন এবং সেরেটোনিন ক্ষরণ হ্রাস পাচ্ছে করোনা আক্রান্ত হলেই ফলেই মন এবং মানসিক দুটোই তাদের মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গেই নাসারন্ধ্র অঞ্চলে মিউকাস বেশ অনেকদিন ধরেই হালকা জাল বুনে বাসা বেঁধে থাকার কারণে যথেষ্ট পরিমাণে ঘ্রাণ ফিরে আসতে সমস্যা হতে পারে বলেও অনুমান করেছেন তারা।
বিশেষ করেই তারা জানাচ্ছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষ দুর্বল যতটা হয়ে পড়ছেন তার পরেও খাবার খাওয়ার ইচ্ছে কিন্তু একেবারেই তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলেই এটুকু প্রমাণিত যে খাবার শরীরে ঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম নয়। বরং বেশি মাত্রায় খেলেই তাদের মধ্যে বমি ভাব, কিংবা হাত পা অসাড় হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আবার বেশ কিছু চিকিৎসক পারসমিয়ার মত রোগের উল্লেখ করেছেন। পছন্দের খাবারের গন্ধও তারা সহ্য করতে পারছেন না। তুলনামূলক ৫০% মানুষ কিন্তু এখনও এই সমস্যার আওতায়! বাকিদের মধ্যে রয়েছে শরীর সংক্রান্ত নানা সংশয়।
চিকিৎসকরা একে স্মেল ডিপ্রেশন বলেও চিহ্নিত করছেন। অর্থাৎ শুধু খাবার কিংবা নির্দিষ্ট কোনও কিছুর গন্ধ শুঁকতে শুধু অসুবিধে হচ্ছে না বরং, তারা অনেকরকম গন্ধ মনে করতেও পারছেন না। সেই জাতীয় খাবারের স্মৃতি বিস্মৃতি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা, কারণ স্মৃতিভ্রম কিন্তু করোনা পরবর্তীতে স্বাভাবিক বিষয়। তবে শুধু ঘ্রাণই! মানুষ নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও কোনটি ঝাল, কোনটি টক এগুলি বলে দিতে পারছেন। বিশেষ করেই মানুষ অতিরিক্ত কার্ব এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে বেশি পছন্দ করছেন যেটি শরীরের পক্ষে খারাপ।
কীভাবে সুস্থ থাকবেন?
- ভিটামিন সি জাতীয় ফল খান
- প্রাণায়াম করুন, বিশেষ করে অনুলোম বিলম
- নাক দিয়ে ঠাণ্ডা জল টানার অভ্যাস করুন, অপরদিকে সেই জল বের করে দিন
- প্রতিদিন আধা কুচি রসুন এবং অল্প পরিমাণে আদা খান, এতে স্মেল ডিপ্রেশন কমতে থাকে
এই ধারণা একেবারেই ভুল যে ওমিক্রন থেকে এসব কিছুই সম্ভব না। বিশেষ করে এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময়ে নিজেকে একটু দেখে রাখুন, পরখ করুন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন