বামাক্ষ্যাপার শিষ্য, অলৌকিক শক্তির অধিকারী তারাক্ষ্যাপার মন্দির আজও মনস্কামনা পূরণের তীর্থক্ষেত্র: Tarakhaypa Jora Kali Temple
Bamakhayapa's disciple Tarakhayapa: নদীর জলের ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যেতেন। তাঁর পা একটুও ডুবত না। আবার কখনও দেখা যেত যে তিনি পদ্মাসনে বসে ভাসতে ভাসতে নদীর ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার, ফিরেও আসছেন ঠিক সেভাবেই। যা দেখে উপস্থিত লোকজন অবাক হয়ে যেতেন। তাঁর মুখের কথা যেন ছিল চন্দ্র-সূর্যের মত সত্য। যাকে যা বলতেন, সত্যি হয়ে যেত।
Bamakhayapa's disciple Tarakhayapa: নদীর জলের ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যেতেন। তাঁর পা একটুও ডুবত না। আবার কখনও দেখা যেত যে তিনি পদ্মাসনে বসে ভাসতে ভাসতে নদীর ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার, ফিরেও আসছেন ঠিক সেভাবেই। যা দেখে উপস্থিত লোকজন অবাক হয়ে যেতেন। তাঁর মুখের কথা যেন ছিল চন্দ্র-সূর্যের মত সত্য। যাকে যা বলতেন, সত্যি হয়ে যেত।
বিগ্রহ আনা হয়েছিল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা (Satkhira of Bangladesh) থেকে।
আসল নাম ছিল মণিমোহন গোস্বামী, ভক্তদের কাছে পরিচিত ছিলেন তারাক্ষ্যাপা নামে।
হিন্দু-মুসলিম, উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজনই তাঁকে ভক্তি করতেন।
বামাক্ষ্যাপার এই শিষ্যকে সংগীতশিল্পী রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ও অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
Advertisment
রাস্তার দু'ধারে দুটি কালী মন্দির। সেই কারণে এই মন্দিরকে বলে জোড়া কালী মন্দির। একটি মন্দিরের বিগ্রহ কষ্টিপাথরের। অন্যটি নিমকাঠের। এই দুটি মন্দিরের পরিচিতি যাঁর জন্য, তিনি বহুকথিত সিদ্ধপুরুষ বামাক্ষ্যাপার শিষ্য মণিমোহন গোস্বামী ওরফে তারাক্ষ্যাপা। শোনা যায়, সাধক তারাক্ষ্যাপার পিঠে জ্বলন্ত চিতাকাঠ দিয়ে আঘাত করেছিলেন, তাঁর গুরুদেব সাধক বামাক্ষ্যাপা (Bamakhaypa)। তারাক্ষ্যাপার অলৌকিক ক্ষমতা এতটাই ছিল যে, হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও তাঁর ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন বলেই কথিত আছে।
বামাক্ষ্যাপার শিষ্য তারাক্ষ্যাপা।
তারাক্ষ্যাপার (Tarakhaypa) অলৌকিক ক্ষমতা স্থানীয় বাসিন্দা ও ভক্তদের দাবি, বামাক্ষ্যাপার মতই তারাক্ষ্যাপাও ছিলেন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। কথিত আছে, তারাক্ষ্যাপা তাঁর অলৌকিক ক্ষমতাবলে জলমগ্ন ইছামতীর নদীর জলের ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যেতেন। তাঁর পা একটুও ডুবত না। আবার কখনও দেখা যেত যে তিনি পদ্মাসনে বসে ভাসতে ভাসতে নদীর ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার, ফিরেও আসছেন ঠিক সেভাবেই। যা দেখে উপস্থিত লোকজন অবাক হয়ে যেতেন। তাঁর মুখের কথা যেন ছিল চন্দ্র-সূর্যের মত সত্য। যাকে যা বলতেন, সত্যি হয়ে যেত। শোনা যায়, এক রোগীকে নিজের খাওয়া সিগারেটের টুকরো মাদুলি বানিয়ে ধারণ করতে দিয়েছিলেন তারাক্ষ্যাপা। সেই রোগী সেই নির্দেশ পালন করার পর সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর জোড়া কালী মন্দিরের দুটি বিগ্রহের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে বহু অলৌকিক ঘটনা। তার মধ্যে একটি বিগ্রহ আনা হয়েছিল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা (Satkhira of Bangladesh) থেকে। বিখ্যাত গায়ক রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ও (singer Ramkumar Chattopadhyay) তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন বলেই কথিত আছে।
Advertisment
আজও দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ভক্তরা মনস্কামনা পূরণের আশায় ছুটে আসেন।
বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে তারাক্ষ্যাপার যোগাযোগ হল কীভাবে? কথিত আছে, তাঁর পৈতে হওয়ার সময় দণ্ডী ভাসাতে গিয়ে মণিমোহন আর ফেরেননি। সোজা তারাপীঠে চলে গিয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘদিন তিনি বামাক্ষ্যাপার কাছেই ছিলেন। সেখানে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন তারাক্ষ্যাপা নামে। এক সকালে বামাক্ষ্যাপা চুল্লির জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে তারাক্ষ্যাপার পিঠে আঘাত করেছিলেন। মহাগুরু বামাক্ষ্যাপা তাঁর শিষ্যকে আদেশের সুরে বলেছিলেন, 'তুই বাড়িতে ফিরে যা। সংসার ধর্ম কর পালন। আর, মানুষের মঙ্গল কর।' তারপরই তারাক্ষ্যাপা ফিরে আসেন তাঁর বসিরহাটের বাড়িতে।
সংগীতসাধক রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁর কাছে যাতায়াত করতেন।
মদ্যপানের মধ্যেও অলৌকিক ঘটনা কথিত আছে, তারাক্ষ্যাপা সব সময় মদ্যপান করে থাকতেন। আর, বামাক্ষ্যাপার মতনই সবসময় 'তারা তারা' বলে দেবীকে ডাকতেন আর কান্নাকাটি করতেন। শোনা যায়, তারাক্ষ্যাপা একবার মাটির পাত্রে চোলাই রেখে দিয়েছিলেন। সেই সময় অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অফিসার চোলাই উদ্ধারে আসেন। কিন্তু, তিনি প্রথমে ভয়ে তারাক্ষ্যাপার কাছে যেতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কারণ, সেই সময় সাধক হিসেবে তারাক্ষ্যাপার বিরাট নামডাক হয়ে গিয়েছিল। বহু বিশিষ্টজন ছিলেন তাঁর শিষ্য। তার মধ্যেই তিনি সাহস করে তারাক্ষ্যাপাকে বলেছিলেন, 'গুরুদেব ওঁর মধ্যে চোলাই আছে।' পালটা তারাক্ষ্যাপা ওই অফিসারকে বলেছিলেন, 'হাত দিয়ে দ্যাখ্!' অফিসার পাত্রের মধ্যে হাত দিতেই চোলাইয়ের বদলে হাতে ঝোলাগুড় উঠে এসেছিল।
বসিরহাটের জোড়াকালী মন্দিরে নিমকাঠের বিগ্রহ।
জোড়া কালী (Jora Kali Temple) মন্দিরে কীভাবে যাবেন? শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদ যাওয়ার ট্রেনে উঠে নামতে হবে বসিরহাট (Bashirhat) স্টেশনে। স্টেশন থেকে টোটো চেপে বোটঘাট আসতে সময় লাগে ১৫ মিনিট। সেখান থেকে মহাসাধক তারাক্ষ্যাপার আনন্দময়ী মায়ের কালী মন্দিরে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট। এই মন্দিরই সাধক তারাক্ষ্যাপার জোড়া কালী মন্দির নামে পরিচিত।