ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ শাক-চোদ্দ বাতির নেপথ্যের ইতিহাস জানেন?

জেনে নিন ভূত চতুর্দশীর অজানা কাহিনী।

জেনে নিন ভূত চতুর্দশীর অজানা কাহিনী।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
NULL

ভূত চতুর্দশী

কথায় বলে বিদেশের মাটিতে নাকি ভয়ংকর সেজে মুখে রঙের আঁকিবুকি কেটে হ্যালোউইন পার্টি সবাই উপভোগ করে। তবে, আমরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ভূতের রাজা, আর পেত্নী রানী, আলোর মাঝে হয়রানি? অর্থাৎ ভূত চতুর্দশী কিন্তু বাঙালিদের কাছে বিশেষভাবে এক পার্বণ। মহালয়ায় যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয় এইদিন চৌদ্দপুরুষ এর উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়। 

Advertisment

আসলে ভূত চতুর্দশী কী? দীপান্বিতা কালী পুজোর আগের দিন অর্থাৎ চতুর্দশী এর ক্ষণ পরে গেলেই প্রতি বাড়িতে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে বাতি দেওয়া হয়। ঘর বাড়ি উঠোন এবং সর্বত্রই ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভূত অর্থাৎ অতীত, এবং চতুর্দশী অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের ১৪ তম দিন। পিতৃ এবং মাতৃকুলের সাত পুরুষের উদ্দেশ্যে বাতি প্রদান। পুরাণ মতে, এইদিন মহাকালী ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে শুরু করেন। অশুভ শক্তির বিনাশের পূর্বক্ষণ এই ভূত চতুর্দশী। হিসেবমত সমস্ত প্রদীপ ঘিয়ের হওয়া উচিত কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তেলের শিখা ব্যবহার করা হয়। দীপাবলি উপলক্ষে যেমন চারিদিকে অন্ধকার ঘুঁচে গিয়ে আলোয় ভরে ওঠে তেমনই ভূত চতুর্দশী- এই বিশেষ দিনে আত্মা প্রেতাত্মার বিনাশের শুরু। 

শুধু তাই নয়, এইদিন বাঙালি পরিবারে নিয়ম মেনেই চৌদ্দ শাক খাওয়ার চল আছে। অর্থাৎ চোদ্দ রকমের গাছের পাতা সঙ্গে বাদাম এবং বড়ী মিশিয়ে সকলকেই এটি খেতে হয়। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস। কথিত আছে, এক ব্রাহ্মণ এবং তাঁর স্ত্রী দুজনেই নিজেদের বাসভবন পরিষ্কার না করে দিনের পর দিন নোংরা করে রাখতেন। এবং সেখানেই নানান ভূতের আগমন ঘটতে থাকে। হঠাৎ একদিন সেই বামুনের নজরে আসে ভূতেদের শোরগোল। ব্যাস! ওমনি মাথায় হাত আর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করলেন বাড়ির দেখভাল। নতুনভাবে সবকিছুই পরিষ্কার করলেন বটে, তেমনই ১৪ রকম গাছের পাতার সহযোগে সারা বাড়িতে গঙ্গার জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করার প্রয়াসও করেন। সেইদিনের পর থেকেই কিন্তু ভূত চতুর্দশী উপলক্ষে ১৪ শাক খাওয়ার চল।

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
Advertisment

 এবার জেনে নিই কোন কোন শাকের পাতা ধরা থাকে। ওল কপি শাক, লাল শাক, কেতকী পাতা, বেতো শাক, সর্ষে শাক, কাসুন্দে পাতা, নিম পাতা, শালিঞ্চে পাতা, হেলেঞ্চা পাতা, পলতা পাতা, শেলুক পাতা, আমরুথ পাতা, ঘেটু পাতা এবং শুশনি শাক - এই ছিল পুরনো চোদ্দো শাকের বিবরণ। তবে এখন বর্তমানে অনেক কিছুই এদিক ওদিক হয়েছে। 

এইদিন একেবারেই বাড়ির আলো নেভাতে নেই। অনেকেই এই দিনে সংযম করেন। কারওর কারওর কাছে ভূত চতুর্দশীর দিন বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের করতে নেই এবং মেয়েদের নাকি খোলা চুলে বেরতে নেই। কথিত আছে, অতীতে নাকি এইদিনে তান্ত্রিকরা শিশুদের ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করতেন  ব্ল্যাক ম্যাজিকের উদ্দেশ্যে। অনেকেই এই গোটা কৃষ্ণপক্ষ ধরেই বাড়ির একদম মাথায় একটি করে প্রদীপ প্রতি সন্ধ্যে তে জ্বালিয়ে রাখেন। তবে হ্যাঁ, এই ভূত সেই ভূত নয়। এর অর্থ আদি কিংবা অতীত, যারা আজ পৃথিবীর বুকে অতীত তাদের উদ্দেশ্যেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Kali Puja history Bengali Rituals