মাথার ওপর দাপট দেখাচ্ছে রোদ, মিনিটে মিনিটে তেষ্টায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। কাজেই এক নিঃশ্বাসে এক বোতল জল খেয়ে ফেলছেন আপনি। এমনই যদি আপনার সাম্প্রতিক কালের অভ্যাস হয় তাহলে খুব শীঘ্রই তা বদলে ফেলুন। জল খাওয়ার উপকারিতা ভুরি ভুরি, কিন্তু তার অগোচরে অপকারিতাও কিন্তু কম নয়। ডায়েটিশিয়ান থেকে ডাক্তার প্রত্যেকেই সুস্থ থাকতে বা ওজন কমাতে পর্যাপ্ত জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে জানেন কি, জল যদি ঠিকঠাক নিয়ম মেনে না খান গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন আপনি। এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন, ডায়েটিশিয়ান রনিতা ঘোষ।
দিনে কত লিটার জল খাওয়া প্রয়োজন ? এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আট গ্লাস, অর্থাৎ দু লিটার। কিন্তু খুব গরমে তিন লিটার খাওয়া যায়। তবে তা একসঙ্গে নয়। গোটা দিনটা জুড়ে সময়মত অল্প অল্প করে জল খাওয়া উচিত। একইসঙ্গে অতিরিক্ত জল খেলে লিভারে চাপ পড়তে পারে আপনার। এতে পরবর্তীকালে লিভার খারাপ বা পেটের অসুখ দেখা দেবে।
আরও পড়ুন: চর্মরোগে বাজার চলতি স্টেরয়েড ক্রিম নয়, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল খেলে হাইপোনাট্রেমিয়ার শিকার হতে পারেন আপনি। অর্থাৎ শরীর থেকে কমে যাবে সোডিয়ামের পরিমাণ। যার ফলে গা গোলানো, বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, শ্বাস কষ্ট, পেশিতে টান, দুর্বলতা দেখা দেবে শরীরে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল খেলে একটা সময়ের পর সবসময়ের জন্য পেট ফুলে থাকবে আপনার। যখনই তেষ্টা পাবে তখনই পর্যাপ্ত পরিমাণের জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান রনিতা ঘোষ।
কিডনিতে সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্রয়োজনের বেশি জল খাবেন না। কারণ শরীরের ভিতরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব কিডনির, কিডনি অনাবশ্যক ক্ষতিকারক পদার্থসমূহ শরীর থেকে দূর করার গুরুত্বপূর্ণ কার্য করে। কিন্তু কিডনি যদি সেই কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে শরীরের ভিতর জমা হতে থাকবে দূষিত পদার্থ। তাই কিডনির অবস্থা বুঝেই জল খাওয়া উচিত।
অনেকেই জল ছাড়া খাবার খেতে পারেন না। কিন্তু জানেন কি, খেতে খেতে জল খাওয়ার অভ্যাস ক্ষতিকারক। উৎসেচকের ঘনত্ব কমে যায়, যার ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে। খাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে পরিমাণমত জল খান। যার ফলে আপনার পেট ভরা থাকবে, কাজেই কম খাবেন। এতে হজম ভাল হবে।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হার্ট ফেলিওর এক নয়
রনিতা ঘোষ জানিয়েছেন, সারাদিনে কাজের ধরন অনুযায়ী জল খাওয়া উচিত। কেউ যদি খুব কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন তাহলে গরমে ঘামের পরিমানও অধিক হবে। সেক্ষেত্রে জলের পরিমান তিন বোতল থেকে আরেক বোতল বাড়ানোই যায়। যারা নটা সাতটার অফিস করেন, এবং সারা দিনটাই কাটে সেন্ট্রাল এসির ঘেরাটোপে তাদের ক্ষেত্রে ৮ গ্লাস জল খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ এসি শরীরের আদ্রতা টেনে নেয়।
রোগা হওয়ার জন্য অন্যতম অস্ত্র জল খাওয়া। কারণ ফ্যাট জাতীয় যৌগ ঘাম এবং প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের বাইরে বেড়িয়ে যায়। রোগা হতে চাইলে রনিতা ঘোষ নিয়ম করে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।