পুজো মানেই একরাশ হই হুল্লোড় মজা আনন্দ আর তার সঙ্গে পেটপুরে খাওয়াদাওয়া। খানাপিনা না হলে ঠিক জমেই না পুজোর আসর। স্ট্রিট ফুড থেকে নানান কুইসিনের খাবার এই সময় কিন্তু বাঁধা নেই কোনও কিছুতেই। আমাদের কাছে পুজো মানেই ইন্ডিয়ান থেকে চাইনিজ কিংবা মোঘলাই ডিশ - স্বাদে বাহারে এক একদিন বিভিন্ন রকম খাওয়াই বিশেষত বাঙালিদের মধ্যে ভীষণভাবে প্রচলিত।
পুজোর খাওয়াদাওয়া মানেই শহরের সেরা কিছু রেস্তরাঁয় ঢুঁ মারা। আবার অনেকেই ভালবাসেন নতুন রেস্তরাঁয় নতুন কিছু ট্রাই করতে। তবে পুজো উপলক্ষে কিন্তু নানাধরনের নতুন কিছু আইটেমের খোঁজ মেলে সর্বত্রই। বেশ কিছু চমক সঙ্গে অপার আতিথেয়তা এই শহরের প্রতিটা মানুষকে খাবারের সঙ্গে চিরবন্ধনে বেঁধে ফেলে।
অনেক সময় আপনাদেরও বিভ্রান্তি হয় বটে! এইখানে যাব নাকি এই খাবার ভাল! তাই আপনাদের জন্য বেশ কিছু রেস্তোরাঁর খোঁজ রইল, আর সঙ্গে স্পেশাল কী পাচ্ছেন চলুন দেখে নিই।
৬, বালিগঞ্জ প্লেস- কিন্তু এবার পুজোয় বেশ চমক এনেছে আমাদের সকলের জন্য। সাবেকিয়ানা থেকে আপ্যায়নের মেলবন্ধন ৬বির কিন্তু একেবারেই তুলনা নেই। রেস্তরাঁর অন্য এক সদস্য সঞ্চিতার সঙ্গে কথা বলেই জানতে পারি, ষষ্ঠী থেকে দশমী পুজোর স্পেশ্যাল মেনুতে রয়েছে দারুণ সব চমক। শুরুতেই থাকছে গন্ধরাজ ঘোল। তারপরেই প্রথা মেনে প্রথম পাতেই থাকছে শাক ভাজা! সপ্তমীতে লাল শাক, অষ্টমীতে কলমি শাক এমনকি নবমী-দশমীতে পোস্ত দিয়ে নটেশাক ভাজা। লুচি থেকে রাধাবল্লভী, কড়াইশুটির কচুরি কী নেই? নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল, হিংয়ের আলুর দম, ছানার মায়ালু, ধোকার ডালনা, ঝুরি আলু ভাজা। আমিষের ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদি গ্রিলড চিকেন, ভেটকি ফ্রাই, পাতুরি, শির মালাইকারী, কাঁচালঙ্কা ধনেপাতা মুরগি থেকে ভুনা চিংড়ি এমনকি টম্যাটো পোস্ত মুরগি রকমের শেষ নেই। শেষ পাতে আমের চাটনি, খেজুর আমসত্ত্বের চাটনি মিষ্টিমুখের আয়োজনেও খামতি নেই একেবারেই। মিষ্টি দই থাকছেই, সঙ্গে রাজভোগ থেকে কালোজাম, ছানার পায়েস, বেকড মিহিদানা এবং রাবড়ি। সৌজন্যে রয়েছে মিষ্টি পান। তাহলে ভুরিভোজে আসছেন তো?
ওহ ক্যালকাটা কিন্তু আপনার অন্যতম ফুড ডেস্টিনেশন হতেই পারে। এক তো এর পরিবেশ, দ্বিতীয়ত লা জবাব স্বাদ মন ভাল করার মতোই। প্রথমত, ওহ ক্যালকাটা স্যালাড ডিপার্টমেন্ট কিন্তু দারুণ ভাল। ইউনিক কিছু অবশ্যই দেখতে পাবেন! যেমন মাছের ডিমের স্যালাড থেকে গন্ধরাজ মুরগির স্যালাড এমনকি মুরগি আনারসের স্যালাড বটে। দই বড়া থেকে চাট, আলু কাবলি থেকে ফল আহার চাট কোনটা চাই? স্টার্টারে ফিশ ফ্রাই তো বটেই, সঙ্গে কাসুন্দি পনির টিক্কা, ঢাকাই তন্দুরি মুর্গ, নওয়াবি তন্দুরি মুর্গ থেকে আম আদা পনির রোস্ট কী নেই! মেন কোর্সের লিস্ট বেশ বড়! ঠাকুরবাড়ির চিংড়ি থেকে পাবদা তেল বড়ি ঝাল, চিকেন কোর্মা থেকে মাটন ঘি রোস্ট, সজনেখালি মাংসের ঝোল সবই পাবেন। সপ্তমী থেকে দশমী মেনু কিন্তু বেশ আলাদা। ওহ ক্যালকাটার সদস্য শেখর বলেন, ষষ্ঠীর বাফেট মেনু কিন্তু একেবারেই মিস করা যাবে না। স্পেশ্যাল কী? ছানা কড়াইশুটির চপ থেকে কাঁচা লঙ্কা মুরগি, নিরামিষ মেথি মটর পনির এবং বাদশাহী ছোলার ডাল। আপনার আশা পূর্ণ হবেই। তিনি আরও বলেন, ওহ ক্যালকাটা পুজো স্পেশ্যাল মিল বক্স-এর দুটি ব্রাঞ্চেই পাওয়া যাবে তবে বাফেট মিলবে শুধুই ফোরাম মল ব্রাঞ্চে। তাহলে কিন্তু ঢুঁ মারতেই হচ্ছে।
Oudh ১৫৯০- এর পুজো পরিষেবা বেজায় টেস্টি, আপনাদের পছন্দ হবেই। রেস্তরাঁর এক সদস্য়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, পুজো উপলক্ষে বেশ কিছু নতুন খাবার যেমন প্রেজেন্ট করা হয় তেমনই মাথায় রাখা হয় সময়ের। ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে যে আইটেম বানানো যাবে সেরকম কিছুই নির্ধারিত থাকে। তবে স্পেশাল কী? হান্ডি বিরিয়ানি থেকে রান বিরিয়ানি তো থাকছেই। কাবাবের মধ্যে গলোটি কাবাব এবং লখনউ পরোটা কলমি কাবাব না খেলে কিন্তু মিস করবেন। গ্রেভিতে নিহারি খাস, কিমা কলেজি এবং মুর্গ মুসল্লম আপনাদের সবসময়ের পছন্দ। শুধু আউটলেট নয় একেবারেই swiggy এবং Zomato দুটিতেই আপনারা অর্ডার দিলেই টেস্টি খাবার কিন্তু হাতের মুঠোয়। কিন্তু পুজোয় একবার কি না গেলেই নয়?
৪৭, ট্যাংরা হাউস- কলকাতার বুকে চাইনিজ তো অনেক খেয়েছেন কিন্তু একেবারেই অথেন্টিক চাইনিজ খেতে হলে এই এশিয়ান কুইজিনে আসতেই হবে। ঠিক অ্যাক্সিস মলের ফোর্থ ফ্লোরে আপনার চাইনিজের মনোবাঞ্ছা কিন্তু পূরণ হবেই। রেস্তরাঁর অন্যতম সদস্য চন্দন সিং বলেন, বেশ কিছু আইটেম এখানকার বেশ বিখ্যাত। ফিশ ইন হানি লেমন পেয়ে যাচ্ছেন আপনি। সঙ্গে থাকছে বার্ন গার্লিক রাইস, ফাইভ ট্রেসার রাইস মানে ৫ রকমের সবজি সঙ্গে চিকেন এবং চিংড়ি সহযোগে এক নিদারুণ উপস্থাপন। মোট ৭/৮ রকমের রাইস যেমন পাবেন সঙ্গে পাবেন নানান রকমের স্যুপ। তাহলে চাইনিজপ্রেমীরা রেডি তো?
পুজো বলে কথা আর একবার আহেলি-তে ভোজনরসিক বাঙালি হয়ে যাবেন না এমন কিন্তু হয় না। আহেলি মানেই পুজোর জন্য নতুন কিছু। এখন 190, A Sarat Bose road কিন্তু পৌঁছানোর ঠিকানা। মেনু বানানো হয়েছে সুন্দর শব্দছকে। বাঙালি আয়োজনে শীতল পরশ থেকে শুরুর কথা এবং সঙ্গীসাথী, নিরামিষ বৈচিত্র থেকে আমিষের আমন্ত্রণ এবং শেষ পাতে মধুরেণ সমাপয়েৎ! শুনতেই বেশ দারুণ লাগছে না! আড়ম্বরে একেবারেই খামতি নেই, গোলাপ ঘোল থেকে তাজা মুরগি ভাজা, তিল মোচার লতিকা এবং চাপরের ঘণ্ট, ছোলা মটরের ধোকা। আমিষে রয়েছে চিংড়ি সর্ষে পালং, ধনেপাতা তেল ইলিশ, পাঁচফোড়ন মুরগি থেকে ডাব চিংড়ি কী নেই তাতে? খেতে ভালবাসেন তো একদিন আহেলিতেই হোক!
পুজোর আমেজে শহর কলকাতায় এক ফালি শান্তিনিকেতন এবং ঠাকুরবাড়ি খুঁজে পেতে গেলে কোপাই রেস্তরাঁতে কিন্তু আপনাকে আসতেই হবে। সাদার্ন এভিনিউর বুকে বলাই উচিত সুখ খুঁজে পাবেন। সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে কাঁচা আমপোড়া সরবত থেকে প্রথম পাতে ভাজা থেকে পেঁয়াজ টম্যাটো ভাজা মুগ ডাল, এঁচড় চিংড়ি, পটলের দোলমা এবং গাটি কচু চিংড়ি। মাছের নানান আইটেমের বাহার থেকে স্পেশ্যাল আম কাতলা এবং দুধ কাঁকড়া সবই পাবেন। সর্ষে বাটার মাংস থেকে মাংস রসল্লা চেটেপুটে খেতে হলে কিন্তু আসতেই হবে এখানে।
ভুতের রাজা দিল বর! এই জায়গায় আকর্ষণ মারাত্মক! রায়মশাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা! ভুতের রাজার পুজো মেনু কিন্তু বেশ! পুজো উপলক্ষেই নতুন আয়োজন প্রতি পদে মাতৃত্বের ছোঁয়া। নিরামিষ আমিষ ভাজাভুজি এবং নানান পদের আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর মহাভোজ থালি কিন্তু দারুণ ব্যাপার। কী কী থাকছে? ভাত শুক্তো, ডাল, ভেটকি, চিকেন, ইলিশ, চিংড়ি আরও কত কী! খেতে কিন্তু একাই হবে, ভাগের কোনও বিষয় নেই। যাদবপুর এবং চন্দননগর উভয় আউটলেটে মিলবে ভুরিভোজ।
পূজোয় ভুরিভোজের গল্প হবে আর সপ্তপদী যাওয়া হবে না সেটি কিন্তু হচ্ছে না। আর এবার কিন্তু পূজো উপলক্ষে সপ্তপদী তে থাকছে দারুন সব চমক।সপ্তপদী রেস্তোরাঁর অন্যতম সদস্য রঞ্জনের বক্তব্যে সাবেকিয় থেকে ফিউশন খাবারে থাকছে আলাদাই কদর।রবি ঠাকুরের ভাইজি প্রজ্ঞসুন্দরি দেবী সারা দেশ ঘুরে নিজের কেরামতিতে নতুন খাবারের ইনভেন্ট করতেন তাই রেস্তোরাঁর এবারের নতুনত্ব ঠাকুরবাড়ির রান্না। স্পেশাল আইটেম হিসেবে থাকছে শারদ সুন্দরী থালি আর তাতে রয়েছে নানা পদের আয়োজন। চিংড়ি চিরে চ্যাপ্টা, মুরগি বাদাম পেয়াজি, জাগুরাথ মাটন থেকে বেগুন মুগ মনোহরী এবং ভেটকি মাইলু। মিষ্টিমুখের জন্য হাজির পাবেন, যেমন তেমন এটি রসগোল্লা এবং পন্তুয়ার মিক্সড ডিজার্ট। তাছাড়াও নিজের পছন্দমত মেনু কিন্তু ঠিক করতেই পারেন। শসা সর্ষে চিংড়ি, বাগানে মসলার মুরগি, এবং খেজুরের পায়েস। তাহলে খাবারের আস্বাদনে আসতেই হবে কিন্তু সপ্তপদী তে।
পুজোয় খাওয়াদাওয়া চলতে থাকুক, জমিয়ে আনন্দে কাটুক!!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন