/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/09/Pandal-Selfie.jpg)
প্রতীকী ছবি।
ভ্লগার বন্ধুদের প্রতি,
শারদীয়া ২০২২ উপলক্ষ্যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার পক্ষ থেকে সকল ভ্লগার বন্ধুদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা মানুষ ও সমাজে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে যেভাবে অবিরাম সেতু তৈরির কাজ করে চলেছেন তাকে কুর্নিশ। বিভিন্ন বিষয়ে আপনারা প্রতিনিয়ত যেভাবে নানা কন্টেন্ট বানিয়ে চলেছেন সে কাজে আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আপনাদের উদ্দেশ্যে রইল এই খোলা চিঠি; ২০২২-এর দুর্গোৎসবের এই শুভ মুহূর্তে।
হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সমাজমাধ্যম ছেড়ে সাধারণ মানুষের যে ডিজিটাল জীবন তাকে আরও তথ্যপূর্ণ, আরও মনোরঞ্জক এবং সেই সময় কাটানোকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলার গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন আপনারা। এ যে বড় কষ্টসাধ্য কাজ সে কথা বলাই বাহুল্য। এবং এই কষ্টের ফলস্বরূপ প্রাপ্তি কেবল মানুষের পাশে থাকা। শুধু এটুকুর জন্য আপনারা নিজেদের জীবন যেভাবে উৎসর্গ করেছেন তাকে সত্যিই কুর্নিশ না করে থাকা যায় না। এই পরিশ্রম আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায় যখন দুর্গোৎসবের মত একটা আনন্দযজ্ঞ চলে। কেবল উৎসবই কেন? করোনার মতো একটা মহামারী, যখন মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল তাদের ডিজিটাল অস্তিত্ব। তখনও কি থেমে থেকেছে ভ্লগাররা? আবার যখন ফণী, আমফান, ইয়াসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে? তখনও কি একটাও ভ্লগ আসেনি ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্য কোনও সমাজমাধ্যমে? আবার উল্টোদিকে কোনো নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে, কোনও নতুন ক্যাফে খুলেছে, নাচ-গান-নাটক-বইপ্রকাশ, কোনো ব্যক্তির উপর, কোনো বস্তুর উপর, কোন কন্টেন্ট বাকি রেখেছেন আপনারা? উত্তর আসে একটিও নয়। ফ্রম আলপিন টু এলিফ্যান্ট, মানুষ আজকে তাদের নিজের ভাষায় নিজের বোধগম্যতার দ্বারা সবই বুঝে নিতে পারছে আপনাদের দৌলতে। এ সত্যিই বড় কঠিন পরিশ্রমের ব্যাপার। এ কথা বারবার মানতে হয়।
শুধু কি ব্যক্তি বা বস্তু বা ঘটনা? ভ্লগারদের কনটেন্টের জগৎ আজ কত বিস্তৃত, তা সে কেউ শখেই এই পেশা বেছে নিক বা পুরোপুরিভাবে। ধরা যাক, কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশে-বিদেশে, তাদের ইচ্ছেমতো। এবং তারা ভ্লগ বানাচ্ছেন। তাদের ভ্লগের মাধ্যমে আরও কত হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ নিজেদের সময়-সুবিধামত ঘুরে আসতে পারছেন সেই জায়গাগুলো। আমরা তো কারও না কারও মুখে শুনতেই পাই যে অমূকের জীবনে ইচ্ছে ছিল অন্তত একবার আমেরিকার লস এঞ্জেলেসে ঘুরে দেখার বা তমুকের ইচ্ছে ছিল প্যারিসের আইফেল টাওয়ার দেখার। ভ্লগারদের মাধ্যমে এভাবে কত মানুষের জীবনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তা সে নাহয় দুধের স্বাদ ঘোলেই মিটল অসুবিধা কী? এর জন্য কি শুধু প্রাণভরা ধন্যবাদ একটু কম পড়ে যায় না? আর দুর্ভাগ্যের বিষয় এর জন্য অন্য কোনো শব্দই হয়তো ঠিক উপযুক্ত হয় না। কীই বা করা যাবে!
এভাবেই আপনাদের দৌলতে এবছর পুজোতে এমন কত মানুষের যে সুবিধা হয়েছে বা স্বপ্নপূরণ হয়েছে তা হয়তো গুনে বলা যাবে না। পুজোর প্যান্ডেল উদ্বোধন হওয়ার অনেক আগে থেকে বা বলা চলে একদম প্রতিমা তৈরি থেকে মানুষ আপনাদের ভ্লগের মাধ্যমে দুর্গোৎসব দেখে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আপনারা না থাকলে হয়তো ঘরে বসে এই অভিজ্ঞতার আনন্দ পাওয়া হয়তো কল্পনাই করা যেত না। দিন নেই রাত নেই আপনারা যেভাবে নিজেদের জীবনের সমস্ত কাজ ফেলে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে গেছেন এবং প্রতিমার কাঠামো তৈরি, চক্ষুদান, মহালয়ার ভোর এবং তর্পণ, বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধন, পুজো পরিক্রমা ইত্যাদির ভ্লগ তৈরি করে মানুষকে তার সুবিধেমতো ঘরে বসিয়েই পুজো দেখিয়ে চলেছেন তার জন্য কী ভাষায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা উচিত তা খুঁজে বের করা করা খুবই দুঃসহ।
এসবের পাশাপাশি সবথেকে বড় ব্যাপার হল জীবনের ঝুঁকি। কিছু ভ্লগার ভিডিও করতে করতে বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, এতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ মানসিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত ও মর্মাহত হন একথা বলাই বাহুল্য। তাই সাবধানে, সুস্থভাবে আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে যাবেন এটাই আশা। পুজোতে রাস্তাঘাট, প্যান্ডেল, খাবারের দোকান, রেস্তোরা, গঙ্গার ঘাট সর্বত্রই সাধারণ মানুষের প্রবল ভিড় থাকে এ তো আমাদের সকলের খুব পরিচিত একটা ছবি। এই ভিড়কে সামলাতে পুলিশ এবং প্রশাসন সর্বদাই মানুষকে একটু তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের সকলেরই কি এটা দায়িত্ব হয় না যে আমরা আমাদের কর্তব্যটুকু পালন করি এবং পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তা করি? সবশেষে এর সঙ্গে এটাও আশা থাকে যে মানুষ আপনাদের কাছ থেকে আরও আরও ভালো কন্টেন্ট পাবে প্রতিনিয়ত। এত বিশাল কনটেন্টের জগতে এত ভ্লগের মধ্যে ভালো ভ্লগ যাতে হয় এবং তা যেন হারিয়ে না যায় এটাই আশা রেখে সমস্ত ভ্লগার বন্ধুদের আবারও শারদীয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
ধন্যবাদ,
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা