Advertisment

বার্লিনের 'ঘরোয়া' পুজোর গরিমা আলাদা

এদেশে অধিকাংশ বাঙালি, হোন তিনি বাংলাদেশের বা পশ্চিমবঙ্গের, রেস্তোরাঁর কর্মী। রেস্তোরাঁর আসল কাজকর্ম বিকেলের পর থেকে, রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত। পুজোয় কখন যাবেন?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
berlin durga puja 2019

ছবি সৌজন্য: www.anirbansaha.com

মহালয়া কবে শুরু (২৮ সেপ্টেম্বর), এই তথ্য নতুন প্রজন্মের অজানা, জানবেই বা কী করে, যদি বয়স্করা না জানান। জেনে কী হবে? আমরা তো এখানে মহালয়ার জাঁকজমক অনুষ্ঠান করি না। পুজোমন্ডপ তৈরি হয় না। দুর্গা মা ঠাকুরও আসেন না। অপেক্ষা করতে হয় সপ্তমীর জন্যে। সপ্তমী থেকে মূলত পুজো, তাও ঘরবন্দি। দুর্গা মা'ও ঘরবন্দি। ঘর খোলা হয় দুপুরের পরে। দর্শকের সমাগম সন্ধের পরে। সপ্তাহান্তে যদি অষ্টমী নবমী, লোকের সংখ্যা বেশি। পুজো উপলক্ষ্যে এদেশে তো ছুটি নেই। সপ্তাহের পাঁচদিনই কাজ, সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি, মূলত যাঁরা অফিসে, কলকারখানায় কাজ করেন।

Advertisment

কাজের পরে ঘরে ফেরা, বাজারসওদা করা, রান্না করা, সংসারের নানা উটকো ঝামেলা, সামাল দিয়ে সন্ধ্যার পরেও সময় পাওয়া দুষ্কর। পুজোয় যাওয়া হয় না। শনিবারেও যে সময় পাওয়া যায়, তাও নয়। গোটা সপ্তাহের বাজার, ঘরদোর পরিষ্কার, ছেলেমেয়ের দেখভাল, ছেলেমেয়ের সঙ্গে বাইরে যাওয়া, ওদের ইচ্ছেপূরণে সামিল না হলে হুলুস্থুল কাণ্ড। এদেশে অধিকাংশ বাঙালি, হোন তিনি বাংলাদেশের বা পশ্চিমবঙ্গের, রেস্তোরাঁর কর্মী। রেস্তোরাঁর আসল কাজকর্ম বিকেলের পর থেকে, রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত। পুজোয় কখন যাবেন?

কলকাতার সাত্যকি সেন, বয়স বাইশ, জন্ম বার্লিনে, ছাত্র। ওঁর বাবা-মা কলকাতার, বাবা-মা'র আদি নিবাস বাংলাদেশের কুমিল্লায়। সাত্যকি বলেছেন, "জেনে কী হবে।" বলার কারণও ব্যাখ্যা করেন। "আমরা এই প্রজন্মের। পুজো আমাদের ধর্মীয় আচার, তাও পারিবারিক। কিন্তু আমরা ধর্মীয় আচারে আবদ্ধ নেই, আমাদের সব বন্ধুবান্ধব এদেশীয়, অধিকাংশই জার্মান, অনেকেই নানা দেশের, তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে বন্ধুতাই মূল্যবান। আমরা ভুলে যাই ধর্মীয় বোধ। আমার বান্ধবী পাকিস্তানের, ওঁর রোজা ঈদের খবর ভুলেও জানান না, জানতেও চাই নি। আমাদের পুজোআচ্চা নিয়ে কথা হয় না। তবে, পুজোয় নিমন্ত্রণ করলে আসেন। মা দুর্গার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, ফেসবুকে পোস্ট করেন, পুজোয় খেয়েদেয়ে মহাখুশি।" এরকম কথা কেবল একজন সাত্যকির নয়, আরও বহু সাত্যকির।

berlin durga puja 2019 ঘরেই পুজো। ছবি: বার্লিন দুর্গাপূজার ফেসবুক পেজ থেকে

বার্লিনে পুজোর বয়স পঞ্চাশ বছরও হয় নি। শুরুতে নিতান্তই ছোটখাটো, বার্লিনে (পশ্চিম বার্লিনে) বসবাসরত কয়েকজন, তথা মুষ্টিমেয় পশ্চিমবঙ্গীয়র উদ্যোগে। শুরুতে দুদিন পুজো একটি ঘরে। দুই বার্লিন একত্রীকরণের পরে পুজোর জাঁকজমক বেড়েছে, কিন্তু একটি ঘরেই, ছাত্রাবাসের একটি 'হলঘরে'। এই হলঘর থেকে এখনও বেরোতে পারে নি, অন্য জায়গা খুঁজে পায় নি। না পাওয়ার কারণ, অর্থাভাব। পুজোর দিনে খাবার বিক্রি করে যেটুকু অর্থ পাওয়া যায়, অথবা কেউ 'ডোনেশন' দিলে। না দিলেও আয়োজকরা চাঁদাটাদা তুলে পুজোর আয়োজন সম্পন্ন করেন। নিশ্চয় মহৎ কাজ, উদ্যোগ।

বার্লিনেই নয় কেবল, বার্লিন-সহ ইউরোপের অধিকাংশ শহরে, যেখানে পুজো, পুজোর মণ্ডপ, বছরের পর বছর মা দুর্গার একই মূর্তি। ফেলা হয় না। জলে ভাসান দেওয়া নিষেধ। দিলে জল দূষিত। আইনত দণ্ডনীয়। সমস্যা আরও। প্রকৃতি-পরিবেশ আইন লঙ্ঘনে কারাদণ্ড।

ইউরোপে দুর্গাপুজোর বিশাল সমারোহ লন্ডনে, ব্রিটেনের আরও চারটি শহরে। ফ্রান্সের প্যারিসেও, তবে লন্ডনের মতো নয়। গত দশ বছরে ইটালির রোমেও কম নয়। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে আরও রাজ্যের শহরে 'বাঙালির কালচার, হিন্দু বাঙালির', দেখেছি। "দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে আমরা কলকাতার নামী গায়ক-শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাই, ইদানীং সমস্যা, শিল্পীরা অন্য শহর থেকে আমন্ত্রণ পান, ডিমান্ড করেন, কত হাজার ডলার দেবে। যেখানে বেশি পান, চলে যান," বললেন বস্টনের বিদিশা চক্রবর্তী।

বার্লিনের পুজোয় কলকাতার নামী শিল্পীদের ডাকা হয় না, আয়োজকদের টাকাকড়ি নেই। এই প্রজন্ম কলকাতার শিল্পীদের নামও জানে না। বাংলা গানও শোনে না, ওরা জার্মান। বার্লিনে নয়, পুজোর সবচেয়ে বড় আয়োজন কোলনে। কারণও আছে। কোলনের পুজো পুরোনো, এবং কোলনের আশেপাশের শহর-রাজ্যে বিস্তর বাঙালির বাস। দুই বাংলার বাঙালি। বার্লিনে বাঙালির সংখ্যা কম। দুই হাজারও হবে না। না হলেও বার্লিনের পুজোর গরিমা আলাদা। দুই বাংলা একাকার। বলেন, "পুজোর আনন্দে আমরা সামিল।"

Durga Puja 2019
Advertisment