নিউ টাউনের বহুতলের গা ঘেঁষে তখন সন্ধে নামছে। গোধূলির শেষ আলোয় চিকচিক করছে কচি কচি মুখগুলো। অপেক্ষা করছে প্যান্ডেলে, রাজারহাটের এএ ব্লকের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করবে ওরাই। সারাদিনের ঠাকুর দেখার ধকল সামলেও ক্লান্তির রেশ মাত্র নেই চোখে মুখে। সকালে দুর্গাপুজোর নতুন জামা পেয়েছে, বাসে চেপে সারাদিন অনেকগুলো ঠাকুরও দেখেছে। চিপস, ফ্রুটির বায়না মিটেছে না চাইতেই। সঙ্গে একটা দিন মনের মতো পেট ভর্তি খাবারও।
পূজা, যাদব, তনিমার কাছে এ বছর পঞ্চমীর দিনটা ছিল আর বাকি পাঁচটা দিনের থেকে একেবারে আলাদা। শোভাবাজার, মানিকতলা চত্বরের ফুটপাথের ধূলোমাখা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ব্রাত্য খুদেরা এ দিন অন্য পুজো কাটিয়েছে। তাই খুশী ওরাও। নেপথ্যে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। এক খুদে দেবপ্রিয়ার কথায়, "বড় হয়ে আমিও এরকম কলেজে পড়ব, ওই দাদা দিদিগুলোর মতো হব আমি।" অন্যদিকে বাসের সিটে আপন মনে খেলতে ব্যস্ত রাজা আর জয়, কথা বলার সময় নেই একদমই।
আপন মনে খেলতে ব্যস্ত খুদেগুলো। pic.twitter.com/INX22JLFVp
— IE Bangla (@ieBangla) October 15, 2018
পঞ্চমীর সকালে যখন শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত প্রায় সকলেই, ঠিক তখনই মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ব্যস্ত একদল আশ্রয়হীনের মুখে হাসি ফোটাতে। এই পুজো পরিক্রমা আর দুঃস্থদের জামাকাপড় দিয়ে পুজোর আনন্দ ভাগাভাগির কাজটা শুরু হয়েছিল বছর সাতেক আগে। প্রতি বছর পুজোর শুরুটা এভাবেই করতে অভ্যস্ত ওই ছাত্রছাত্রীরা। এ বছর খুদেদের সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৭০ জন। মূল উদ্যোক্তা অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস।
কোনও স্পনসর নয়, পড়ুয়ারাই নিজেদের হাত খরচের বেশ কিছুটা অংশ তুলে দেন বাচ্চাদের জামা আর খাবারের জন্য, মাসখানেক ধরে চলে তোড়জোড়। খুদেদের এ দিনের সব খরচ ওই 'দাদা দিদিদেরই'। এ দিন প্যান্ডেলের ভিড়ে চোখে পড়ল বেশ কিছু দৃশ্য, কার্যত কোলে তুলে নিয়েই ঠাকুর দেখানো হচ্ছে শিশুদের। কোনও পড়ুয়া আবার খাইয়েও দিচ্ছেন নিজের হাতে। যাঁদের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই, সকাল থেকে সেই সব খুদের সমস্ত আবদার মিটিয়েছে 'দাদা দিদিরা'।
প্রাক্তনী অথবা বদলি হয়ে যাওয়া অধ্যাপকরাও যে যেখানে থাকেন, অন্তত এই দিনটা ছুটে আসেন সব ফেলে। পরতে পরতে আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই দিনের কর্মকান্ডের সঙ্গে। এমনটাই জানালেন সাংবাদিকতা ও গনজ্ঞাপন বিভাগের প্রাক্তনী পৃথা মুখোপাধ্যায়, কার্যত অফিসের কাজ ছেড়েই চলে এসেছেন তিনি। কোনও প্রাক্তনী আবার বর্তমানে পেশায় সাংবাদিক, অতএব পুরোনো কলেজে ঢুঁ মারা এবং কভারেজ, দুই-ই সেরেছেন। প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুদেষ্ণার কথায়, "এটা আমার প্রথম বছর।এমন একটা কর্মকাণ্ডের শরিক হতে পেরে ভীষণ ভাল লাগছে।"
এ দিন উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত, শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা সহ আরও অনেকেই। একদল জেন ওয়াই-এর এই গোটা উদ্যোগের সাক্ষী হয়ে রইল উত্তর কলকাতা। শেষে বলার অপেক্ষা রাখে না, সব মিলিয়ে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগে শুধু পুঁথিগত শিক্ষাই নয়, দেওয়া হয় মানবিকতার পাঠও। ফের এমনটাই প্রমাণ দিলেন একদল বর্তমান প্রজন্ম।
অন্য পুজোপরিক্রমা নিয়ে কী বললেন মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস?
— IE Bangla (@ieBangla) October 15, 2018