Advertisment

খিদিরপুরের মুন্সীগঞ্জ, এক চাঁদাতেই পুজো-মহরম

"যে ঐতিহ্য সবাইকে কাছে আনে, তা ধরে রাখতেই হবে। তাই শত বাধা এলেও এই পুজোকে বাঁচিয়ে রাখা। আর যে ঐতিহ্য সবার হাতে হাত রাখতে দেয় না, তাকে ফেলে দিতে হবে, তবেই তো সমাজ এগিয়ে যাবে"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ঢাকে কাঠি পড়েই গেছে। কলকাতা সেজে উঠেছে শারদীয়ার মেজাজে। মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ঢল। সেরার সেরা হওয়ার লড়াইয়ে শামিল শহরের নামী দামি পুজো। এসবের পাশেই একটু অন্যরকম ছবি। জাঁক জমক বাহুল্য ছাড়াই এক পুজো। খিদিরপুরের মুন্সিগঞ্জের ফাইভ স্টার ক্লাবের দুর্গোৎসব। এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষই বহু বছর ধরে করে আসছে এখানকার পুজো। বছর বছর বাজেট কমছে, তবু বুক দিয়ে পুজো আগলে রেখেছে সালাউদ্দিনরা।

Advertisment

পুজোর বয়স কত, হিসেব রাখেনি কেউ। বছর ২৪-এর মহম্মদ সালাউদ্দিন বললেন, "ঠাকুরদার সময় থেকে এই পুজো হয়ে আসছে। হাতে গোনা কয়েকটা হিন্দু পরিবার আছে এখানে। মুসলমানই বেশি। পুজোও আমরাই করি। আমাদের বাড়ির মহিলারা পুজোর সব কাজ করেন। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা পুজোর ক'টা দিন খুব হৈহৈ আনন্দ করি। ও ক'টা দিন মনেই থাকে না আমাদের ধর্ম কী"।

আরও পড়ুন, খুঁটি পুজোয় মিষ্টি মুখ করালেন জিশান-রেহান-জুলফিকরেরা

পুজোর কাজকর্ম, মিষ্টি তৈরি, দশমীর বরণ সবই করে থাকেন মুসলিম মহিলারাই। পুজোর কাজে কোনও বাছ বিচারের বালাই নেই। যৌনপল্লীর মহিলাদের ব্যস্ততা এই সময় তুঙ্গে। পুজোর জোগাড় যন্তরের দায় দায়িত্ব অনেকটাই থাকে তাঁদের কাঁধে। ষষ্ঠীর দুপুরে নমাজ সেরেই সালাউদ্দিন আর তার সঙ্গীরা ফের লেগে পড়লেন পুজোর কাজে।

publive-image

ফাইভ স্টার ক্লাবের সম্পাদক বলবন্ত সিং জানালেন, সন তারিখের হিসেব না থাকলেও শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উত্তরপ্রদেশ, বিহারের শ্রমিকরা কলকাতায় এসে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ওরাই প্রথম পুজো শুরু করেন। তাই জন্মলগ্ন থেকেই এ পুজো কোনও বিশেষ ধর্ম, জাত, ভাষা কিমবা সংস্কৃতির মুখ হয়ে ওঠেনি।

আরও পড়ুন, পুজো আসছে, সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতে শিখছে তো আপনার সন্তান?

"যে ঐতিহ্য সবাইকে কাছে আনে, তা ধরে রাখতেই হবে। তাই শত বাধা এলেও এই পুজোকে বাঁচিয়ে রাখা। আর যে ঐতিহ্য সবার হাতে হাত রাখতে দেয় না, তাকে ফেলে দিতে হবে, তবেই তো সমাজ এগিয়ে যাবে। আমাদের ছোট পুজো। বড় স্পনসর আমরা পাই না। ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে সরকার পুজোর জন্য অনুদান দেবে, এমন আবদারও করতে পারি না। রাজ্য সরকারের দেওয়া ২৫ হাজার টাকা পাই আমরা। তবে শহরের এত বড় বড় ক্লাব, ওদের তো সরকারি অনুদান না পেলেও চলে। আমাদের মতো ছোট ছোট ক্লাবগুলো দারুণ অর্থকষ্টে ভোগে", জানালেন বলবন্ত সিং।

বছরে একবারই চাঁদা তোলা হয়। তারপর সেই তহবিল থেকে ভাগাভাগি করে দুর্গা পুজো, মহরম, ঈদের জন্য উদযাপন হয় একটু একটু করে। আসলে ভালো থাকা গুলোও ওরা বাঁচিয়ে রাখতে চায় একটু একটু করে। ধর্মের নামে বড় সহজে দেওয়াল তুলে দেওয়া এই অন্ধকার সময়ে বেঁচে থাক মুন্সীগঞ্জের ফাইভ স্টার ক্লাব। হাত ধরাধরি করে থাক কোহিনূর বিবি- সালাউদ্দিন-বলবন্ত-বিকাশরা।

Durga Puja 2019 religion
Advertisment