কারও হাতে কাদা, কারও হাতে রং-তুলি। কেউ নকশা বানাচ্ছে তো কারও হাতে গড়ে উঠছে ছোট্ট দুগ্গা মা'র ছেলেপুলেরা। একমনে কাজ করে চলেছে ওরা। একে অপরের দিকে তাকানোর পর্যন্ত ফুরসত নেই ওদের। হবে না! হাতে তো আর মাত্র ক'টা দিন। তারপরই তো শহর কলকাতার এক কোণে পুজিতা হবেন আন্দাজ এক ফুটের ছোট্ট দুর্গা। বছর কয়েক আগে এ শহর দেখেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গা। এবার এদের হাতেই গড়ে উঠছে মিনি দুর্গাপ্রতিমা।
কলকাতার তথাকথিত বড় পুজোয় এদের অবাধ প্রবেশ নৈব নৈব চ। অথচ ওদেরও তো ইচ্ছে করে নতুন পাঞ্জাবি বা শাড়ি পরে ফুল বেলপাতা হাতে অষ্টমীর দিন অঞ্জলী দিতে, কিন্তু সেই অধিকারটুকুই ওদের নেই। তাই প্রতিবছর পুজোর সময় ঢাকের আওয়াজে মুখ ভার হয়ে যায়।
তবে এ বারের পুজোটা যেন ওদের। ওরা হল উত্তর কলকাতার বাগবাজার এলাকার পথশিশুরা। যাদের ঘর-বাড়ি বলতে রাস্তার ফুটপাথ। ফুটপাথের সেইসব বাচ্চাদেরকে নিয়েই এবার দুর্গাপুজো হচ্ছে বাগবাজারে। এই প্রথমবার ফুটপাথের খুদেদের দুর্গাপুজো দেখবে তিলোত্তমা।
কলকাতার পুজো মানেই থিম, আর ফুটপাথের এই খুদেদের পুজোতেও থাকছে থিমের আমেজ। থিমের নাম 'ইচ্ছেপূরণ'। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে অর্গোভব হিউম্যানিটি ডেভেলপমেন্ট নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রেশমি আগরওয়াল বললেন, ''থিমের নাম ইচ্ছেপূরণ। ওদের যেরকম ইচ্ছে, সেভাবেই সাজানো হচ্ছে সব। ওরা নিজেরাই সব বানাচ্ছে। ওরা নিজেরাই প্রতিমা বানাচ্ছে, মণ্ডপ সাজাচ্ছে। ওদের প্রতিমা তৈরিতে গাইড করে দিচ্ছেন কুমোরটুলির শিল্পী মালা পাল। ওরা নিজেরাই ব্যানার বানিয়েছে। আমরা শুধু আর্থিক সাহায্য করেছি।''
ফুটপাথবাসী খুদেদের পুজোর মূল উদ্যোক্তা রেশমি আগরওয়াল ও তাঁর স্বামী মহেন্দ্র আগরওয়াল। কীভাবে মাথায় এল এমন ভাবনা? জবাবে রেশমি দেবী বললেন, ''একবার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওদের কয়েকজনকে দেখেছিলাম, কী সুন্দর হাতের কাজ করছিল। ওদের প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ওদের সঙ্গে কথা বলি। ওরা জানায় যে পুজোয় ওরা সেভাবে আনন্দ করতে পারে না। তারপরই এমন পুজো করার উদ্যোগ নিলাম।'' রেশমি দেবী আরও বলেন, ''পুজো ঘিরে ওরা খুব উচ্ছ্বসিত। ওদের মুখে হাসি দেখতে পাচ্ছি, এটা বড় প্রাপ্তি।''
আরও পড়ুন, মহালয়ায় র্যাম্পে হাঁটবে ‘ফুটপাথের দুর্গা’রা
তবে এ পুজোর আয়োজন করছে বলে যে ওরা শহরের হাইভোল্টেজ পুজো মিস করবে, তা কিন্তু নয়। ওরাও এবার পুজো পরিক্রমায় বেরোবে। এ প্রসঙ্গে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান মহেন্দ্র আগরওয়াল বললেন, ''ওদের একদিন আমরা ঘুরতে নিয়ে যাব। পুজো দেখাতে নিয়ে যাব। নতুন পোশাকও দেওয়া হবে।''
হাতে একদম সময় নেই, তাই শেষ মুহূর্তের কাজে চূড়ান্ত ব্যস্ত বাগবাজার এলাকার খুদেদের ২৫-৩০ জনের একটি দল। প্রথমবার দুর্গাপুজোয় ওদের হাতের ক্যারিশমা দেখিয়ে শহরবাসীকে তাক লাগাতে মরিয়া ওরা। দর্শনার্থীদের মণ্ডপমুখী করতে রেশমি দেবীও বললেন, ''সবাই তো বড় পুজো দেখতে যান, আমরা চাইব, এবার সবাই এই পুজোও দেখুন।'' এই পুজো দেখার ঠিকানা হল, বাগবাজার মায়ের বাড়ির সামনে, সারদা প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে।