ভবিষ্য়ৎ জানতে চান? ২০০ বছর পর কেমন হবে এই পৃথিবী? মানবজাতির কী বিবতর্নই বা ঘটবে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এবারের দুর্গাপুজোয়। টাইম মেশিনে চড়ে আপনি দিব্যি ঘুরে আসতে পারেন আগামী ২০০ বছরের দুনিয়ায়। এমনই সুযোগ করে দিচ্ছে শোভাবাজারের জগৎ মুখার্জি পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি। গত বছর সাবমেরিনের ধাঁচে তৈরি মণ্ডপ বানিয়ে তাক লাগানোর পর, এবারের পুজোয় যারা ২২১৮ সালকে স্বাগত জানাবে। অন্য়দিকে, এবারের পুজোয় আস্ত এক লাইব্রেরি, ছাপাখানা, বইয়ের ঝাড়বাতিও নজর কাড়বে তিলোত্তমার, সৌজন্য়ে হাতিবাগান নবীন পল্লী।
ব্য়াপারটা কী? জবাবে জগৎ মুখার্জি পার্কের থিম মেকার সুবল পাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "প্রযুক্তির ভালমন্দ দিক নিয়ে বার্তা দিতেই এমন ভাবনা। প্রযুক্তির উপর আমরা এতটাই নির্ভরশীল যে, আজ মানুষ কার্যত রোবট হয়ে যাচ্ছে। মোদ্দা কথা, প্রযুক্তির সুফল-কুফলই তুলে ধরা হবে।" এ প্রসঙ্গে শিল্পী আরও বলেন, "আমি দেখাতে চাইছি, যে মানুষ ডায়নোসোরের মতো বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। রোবটরা হয়তো মানুষদের কঙ্কাল জাদুঘরে রেখে দেখাবে যে মনুষ্য়জাতি এমন ছিল।"
কেমন করে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ? জবাবে শিল্পী জানালেন, "টাইম মেশিনের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। মণ্ডপে ঢুকলে দর্শনার্থীদের মনে হবে যেন টাইম মেশিনে চেপেছেন। বহু ঘড়ি রাখা থাকবে। লোহার পাইপ, স্টেনলেস স্টিল দিয়ে বানানো হচ্ছে প্য়ান্ডেল।অবশ্য শুধু মণ্ডপই নয়, এবার দুর্গাপ্রতিমাতেও আলাদা করে চমক রাখছে জগৎ মুখার্জি পার্ক পুজো কমিটি। কলকাতার এক নামী শাড়ির বিপণির বেনারসী শাড়ি পরবেন এখানের মা দুর্গা। শুধু তাই নয়, এক নামী গয়না বিপণির গয়নায় সাজবেন। হীরে ও রুপোর মিশ্রণ দিয়ে বানানো হচ্ছে অলঙ্কার।
অন্য়দিকে, বইপোকাদের বিশেষ করে চমকে দেবে উত্তর কলকাতার নামী পুজো কমিটি হাতিবাগান নবীন পল্লি। ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় হাতে বই নিয়ে পড়ার পাট লাটে উঠেছে। লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগারেরও অবলুপ্তি ঘটছে বলা যায়। ইন্টারনেটের যুগে কেই বা আর কষ্ট করে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুঁজতে চায় বলুন। এবার তাই সেই হারিয়ে যাওয়া লাইব্রেরিকেই ফেরাচ্ছেন হাতিবাগান নবীন পল্লী পুজো কমিটি।
জগৎ মুখার্জি পার্কের মতো উত্তরের এই নামী পুজোরও থিমের দায়িত্বে শিল্পী সুবল পাল। এ ব্য়াপারে তিনি বললেন, "আজ কেউ চাইলেই ইনটারনেটে প্রয়োজন মতো বই পড়তেই পারেন। কিন্তু হাতে বই নিয়ে পড়ার যে নস্টালজিয়া, সে তো আলাদা অনুভূতি। লাইব্রেরিতে গিয়ে বই সংগ্রহ করা, বা সকলের মধ্য়ে বসে বই পড়ার মজাটাই আলাদা। আমরা দেখানোর চেষ্টা করছি যে, ই-বুক আছে, কিন্তু লাইব্রেরির মডার্ন ভার্সান হিসেবে বুকস ক্য়াফে দেখানোর চেষ্টা করছি।"
হাতিবাগান নবীন পল্লির থিম প্রসঙ্গে শিল্পী আরও জানালেন, "পুরনো একটি লাইব্রেরির আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। প্রায় ৫০ হাজার বই রাখা থাকবে। বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা থেকে নেওয়া হচ্ছে বই। এছাড়াও ছাপাখানাও থাকছে। বই দিয়ে ঝাড়বাতিও তৈরি করা হচ্ছে।" কেমন সাজে সাজছে এখানকার প্রতিমা? উত্তরে সুবল জানালেন, চণ্ডীপূরাণের চণ্ডী হিসেবে প্রতিমাকে দেখানো হবে।
'বলো দুগ্গা মাই কী' বলতে আর দেড় মাসও বাকি নেই। তার আগেই কলকাতার অলিগলিতে সেজে উঠছে নানান শিল্পকলা। আর তা চাক্ষুষ করতে হলে হাতে গোনা কয়েকটা দিন শুধু অপেক্ষা করতে হবে।