অষ্টমীর জমকালো সন্ধেয় যখন ওদের মাথা গোঁজার জায়গা ছুঁয়ে লাখো লাখো পা প্যান্ডেলের দিকে এগিয়ে চলে, তখন ওদের ফ্যাকাশে চোখ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। রংবেরঙের সাজ, নতুন নতুন জামা, উচ্ছ্বাস দেখে ওদের চোখে-মুখেও এক প্রশান্তি মেলে। ওরা হয়তো ভাবে, কবে আসবে সেদিন, যেদিন ওরাও শুঁকবে পুজোর নতুন জামার গন্ধ। সমবয়সীদের পুজোর আনন্দে মাততে দেখে ওদের চোখ জুড়িয়ে যায়। কখনও বা ওদেরও ইচ্ছে হয় নতুন জামা-জুতো পরে বাবা-মায়ের হাত ধরে ঠাকুর দেখতে যাবে। সে তো ওদের কাছে অলীক স্বপ্ন। তবে এবারের পুজোটা ওদের কাছে স্পেশাল হতে চলেছে। ওরাও পুজোর উপহার হিসেবে পাচ্ছে নতুন জামা, গয়না...আরও কত কী! শুধু কী তাই, ওরা যে এবার ক্যাটওয়াক করবে। যেমন তেমন সাজে তো মোটেও নয়। মা আসছে বলে কথা, তাই মা দুগ্গার সাজেই ওরা বিভিন্ন অবতারে র্যাম্পে হাঁটবে।
ওরা বলতে যাদের মাথার উপরে ছাদ নেই, শুধুই খোলা আকাশ। রাজপথের ধারে যাদের ওই সুখের বাসার কান ঘেঁষে রোজ এ শহরের মানুষ হেঁটে চলে। হ্যাঁ, ওরা ফুটপাথবাসী। এবার সেই ফুটপাতের খুদে কন্যেদের নিয়েই অভিনব শো-র আয়োজন করেছে শ্যামবাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সংবেদন’। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এমন উদ্যোগের পাশে দু’ হাত তুলে সমর্থন করেছে সংঘতীর্থ পুজো কমিটি। তবে এটা যে একেবারেই নিছক কোনও র্যাম্প ওয়াক নয়, তা বললেন ‘সংবেদন’-এর সমিত সাহা।
আরও পড়ুন, ধূপধুনোর গন্ধ ঘিঞ্জি গলিপথে, শারদোৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে সোনাগাছিতে
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সমিত বললেন, ‘‘ফুটপাথবাসীদের ছেলেমেয়েদের কোনও লক্ষ্য থাকে না। বড় হয়ে কী হবে তুমি? একথা জিজ্ঞেস করলে আর চার-পাঁচটা বাচ্চার মতো কোনও জবাব দেয় না ফুটপাথের ছেলেমেয়েরা। ফলে ওদের জীবনের একটা লক্ষ্য থাকা দরকার। সেই লক্ষ্য ঠিক করতেই এই ভাবনা।’’ এরপর সমিত আরও বললেন, ‘‘কেউ উকিল সাজবে, তো কেউ ডাক্তার, আবার কেউ পুলিশ বা শিক্ষক, বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের উপস্থাপিত করা হবে।’’ তবে এটা ‘যেমন খুশি সাজো’-র মতো নয় কিন্তু। সমিতবাবুর কথায়, ‘‘প্রায় ৫০ জন ফুটপাথের শিশুকন্যাদের নিয়ে এই শো করা হবে। যেহেতু সব নারীর মধ্যেই দুর্গা থাকে। তাই শুধুমাত্র ফুটপাথের শিশুকন্যারা অংশগ্রহণ করছে। ওদেরকেই জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, ওরা বড় হয়ে কী হতে চায়। ওরা যে যেমন উত্তর দিচ্ছে, সেইমতোই ওদের সাজানো হবে।’’
মহালয়ার বিকেলে র্যাম্পে হাঁটবে তিলোত্তমার ফুটপাথের শিশুকন্যেরা। তার আগে সংবেদনের ঘরে জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি। র্যাম্পে হাঁটবে বলে কথা, গ্রুম করা হবে না তা আবার হয় না কী? সমিতবাবু বললেন, ‘‘ওদের গ্রুম করা হচ্ছে, প্রস্তুতি চলছে।’’ তবে এই র্যাম্পই নয়, এদিনের অনুষ্ঠানে ফুটপাথের যেসব খুদে শিশুকন্যারা অংশ নিচ্ছে, আগামী দিনে তাদের পড়াশোনার সাহায্যের জন্যও এগিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। র্যাম্পে কে ভাল হাঁটল, তা ঘোষণা করার জন্য থাকছে বিশেষ বিচারকমণ্ডলীও। সেইসঙ্গে থাকছে উপহারের ডালি। পুজোর উপহার হিসেবে কী থাকছে? জবাবে সমিতবাবু বললেন, ‘‘নতুন জামা তো থাকছেই, তাছাড়া বিভিন্ন সাজগোজের জিনিসও দেওয়া হবে সকলকে।"