শহর কলকাতায় শিব মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম না। কিন্তু, পুরোনো শিব মন্দির বলতে, যা ভক্তদের মনে আসে, তেমন মন্দির হাতেগোনা। তবে, কালী মন্দিরের সংখ্যা অনেক। সেই হিসেবে শিবও সেই সব মন্দিরে আছেন। তবে, শুধু শিবের পুরোনো মন্দির, তেমন একটা নেই। যে কয়েকটি আছে, তার অন্যতম হল নিমতলা অঞ্চলের দুর্গেশ্বর বা মোটা শিবের মন্দির। এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল পলাশির যুদ্ধের তিন দশক পরেই। ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে (বাংলার ১২০১ বঙ্গাব্দ) এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন হাটখোলা দত্ত পরিবারের মদনমোহন দত্তের দুই ছেলে রসিকলাল দাস দত্ত ও হরলাল দাস দত্ত।
এই দত্ত পরিবারের মদনমোহন দত্ত ছিলেন সম্ভ্রান্ত ব্যাংকিং ব্যবসায়ী ও কয়েকটি জাহাজের মালিক। তাঁর সাহায্যেই ছাতুবাবু ও লাটুবাবুর বাবা রামদুলাল দে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। সেই মদনমোহন দত্তের প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে বিশাল আকারের শিবলিঙ্গ। যার উচ্চতা প্রায় ২.৫ মিটার। শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালার জন্য সিঁড়িও রয়েছে এ মন্দিরে। এই শিবলিঙ্গটি তৈরি করেছিলেন শ্রীগদাধর দাস ভাস্কর। তবে, শিল্পীর বাড়ি ঠিক কোথায়, সে কথার উল্লেখ নেই মন্দিরের কোনও দেওয়ালেই।
আরও পড়ুন- শহর কলকাতায় জগদ্ধাত্রী মন্দির, সংকটে তিনিই দেন পরিত্রাণের পথ
মন্দিরটি ভক্তদের জন্য সকাল থেকেই খোলা থাকে। সকালে মন্দির খোলে ভোর ৫টায়। তারপর থেকে একঘণ্টা খোলা থাকে মন্দির। এরপর আবার মন্দির খোলে সকাল সাড়ে ৭টায়। সেখান থেকে টানা দুপুর ১২টা ১৫ পর্যন্ত। পুরোনো মন্দির। মনস্কামনা পূরণ হয়। সেই জন্যই প্রতিদিনই এখানে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালার জন্য ভক্তদের ভিড় হয়। পুণ্যার্থীরা তাঁদের মনস্কামনা পূরণের জন্যও এই মন্দিরে আসেন। কারণ, ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে কোনও মনস্কামনা নিয়ে এলে, তা পূরণ হয়। মন্দিরের পূর্ব দিকের দেওয়ালে রয়েছে বটের ঝুড়ি। সেখানে এরকম বহু বাঁধা ঢিল দেখা যায়।
এই মন্দির দৈর্ঘ্যে ৮.৬ মিটার। প্রস্থে ৭ মিটার। উচ্চতায় আনুমানিক ১৫ মিটার। আটচালা এই মন্দির তার আয়তনের তুলনায় অত্যধিক উঁচু। শিবলিঙ্গের বিশাল আকারের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা এই শিবলিঙ্গটিকে মোটা শিব বলে ডাকেন।