ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম মথুরায়। গোকুল আর বৃন্দাবনে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে মথুরায় কাটিয়ে, নানা কারণে তিনি পরিবার ও প্রজাদের নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দ্বারকায়। বাকি জীবনটায় দ্বারকাই ছিল তাঁর লীলাক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু। আজও তা স্মরণে রেখেছে দ্বারকা। যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আজও পূজিত হন দ্বারকাধীশ রূপে। সেই রূপে পুজোর জন্য তাঁর মন্দিরও রয়েছে। যার নাম দ্বারকাধীশ মন্দির।
অনেকে আবার এই মন্দিরকে ডাকেন 'জগৎ মন্দির'। কেউ বা বলেন 'নিজ মন্দির'। নাম যাই হোক না-কেন, ভক্তরা জানেন এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মন্দির। তিনিই দ্বারকাপতি, দ্বারকাধীশ, দ্বারকার রক্ষকর্তা। সর্বসাধারণের প্রতি তাঁর সমান নজর। যেখানে এই মন্দির, তা আসলে বর্তমান চেহারায় যেন এক পাঁচতলা বাড়ি। যেখানে রয়েছে ৭২টি স্তম্ভ।
পুরাতত্ত্ববিদরা হাজারো পরীক্ষার পর অনুমান করছেন, এই মন্দিরের বয়স আনুমানিক দুই থেকে আড়াই হাজার বছর। নানা সময়ে মন্দিরটি ভেঙে যায়। অথবা বৈদেশিক শক্তি মন্দিরটি ভেঙে দেয়। আবার, সেখানেই গড়ে তোলা হয় মন্দির। এভাবেই কালে কালে দুই থেকে আড়াই হাজার বছর কেটে গিয়েছে। যেমন, যদু বংশ ধ্বংসের পর, শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র বজ্রনাভ তাঁর মন্দিরটি দ্বারকায় তৈরি করিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের বাসস্থানের ওপরই তৈরি হয়েছিল এই মন্দির।
আরও পড়ুন- বহুবার ভাঙাগড়া, হাজারো বিতর্ক, তারমধ্যেও পুণ্যার্থীদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র কেশবদেও মন্দির
দ্বারকাবাসীর কাছে এই মন্দির সেই সময় পরিচিত ছিল হরিগৃহ নামে। এরপর ১৪৭২ খ্রিষ্টাব্দে আসল মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায় বৈদেশিক আক্রমণে। ধ্বংস করে দিয়েছিলেন মেহমুদ বেগাদা নামে এক আরব সেনাপতি। কিন্তু, ধ্বংস করেও হরিগৃহকে ভক্তদের হৃদয় থেকে দূরে করা যায়নি। পনেরো ও ষোড়শ শতকে ফের এই মন্দির নতুন করে গড়ে ওঠে। শুধু গড়েই ওঠে না। তা আরও প্রসারিত হয়।
সেই সময় চালুক্যদেশের শাসন। যার ফলে, আরবরা আর বিশেষ দাপাদাপি করার সুযোগ পায়নি। সেই পরিস্থিতিতে ফের হরিগৃহ তৈরি হলেও তার স্থাপত্যরীতিতে কিন্তু বদল ঘটে যায়। সেই স্থাপত্যরীতি আগের স্থাপত্যরীতি থেকে বেশ আলাদা। এই নতুন স্থাপত্যরীতিতে ধরা থাকে চালুক্যদের সময়কালের ছাপ। নতুন মন্দিরটিও তৈরি হয় চুনাপাথর দিয়ে। গৌতমী নদীর ধারে তৈরি এই মন্দিরের দুটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। উত্তরের প্রবেশদ্বারকে বলে ' মোক্ষদ্বার'। আর, দক্ষিণের প্রবেশদ্বারকে বলে 'স্বর্গদ্বার'।