অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার, জয় করার ইচ্ছে মানুষের সেই আদি লগ্ন থেকেই। একের পর এক ভয় জয় করে, প্রতিকূলতা পেরিয়ে, অসাধ্য সাধন করে আজ এখানে দাঁড়িয়ে সভ্যতা। পৃথিবীর কোন দুর্গম প্রান্তে মানুষের পা পড়েনি? কোন অসম্ভবকে সম্ভব করেনি সে? আজ সেরকম এক অসম্ভবের জন্মদিন।
২৯ মে, ১৯৫৩। দুনিয়ার সর্বোচ্চ বিন্দু মাউন্ট এভারেস্ট চুড়োয় পৌঁছে গেলেন এডমন্ড হিলারি আর তেঞ্জিং নোরগে। ইতিহাসের আজ ৬৭ বছর পূর্ণ হল। ৮৮৪৮ মিটার উচ্চতায় এরপর অজস্রবার পৌঁছেছেন দেশ বিদেশের পর্বতারোহীরা। বাংলা থেকেও বহুবার তৈরি হয়েছে নানা রেকর্ড। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছরই সারা বিশ্বের সমস্ত পর্বতারোহীদের জন্য এভারেস্টের রুট ওপেন হয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ বিন্দু ছোঁয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এখনও দীর্ঘ অধ্যাবসায়, প্রতিকূলতা পেরিয়ে শিরোনামে আসতে হয় আজকের এডমান্ড, তেঞ্জিং দের। স্বপ্ন ছোঁয়ার পথ এখনও একইরকম দুর্গম, তবে প্রযুক্তি এসেছে, সময়ের সাথে সাথে এসেছে পেশাদারি দক্ষতা। বাণিজ্যিকরণের হাওয়াও কি লাগেনি? বছর বছর 'সামিট সিজন'-এ হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে কি একটু একটু করে একলা হয়ে যাচ্ছে তুষার রাজ্য?
তবে এ বছরের মে মাসটা অন্যরকম, গোটা আরোহণের মরশুমটাই অবশ্য। বিগত আড়াই মাস, টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বসারঘর, শোবার ঘরের আলোচনার শুরুতে নাম ভূমিকায় থাকা কোভিড-১৯ তৈরি করেছে অন্য এক ইতিহাস। ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম (২০১৫ সালের নেপালের ভূমিকম্প ছাড়া) নেপালের দিক থেকে বন্ধ থাকল সামিট। না, সারা মাস জুড়ে নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হয়নি, ভাঙেনি, আবার তৈরি হয়নি। অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা ঘটেনি পাহাড়ের কোলে। সামিট সিজনের শেষে বরফের রাজ্য থেকে নামিয়ে আনতে হয়নি কেজি কেজি আবর্জনা। একটা বছর কেউ ঘুম ভাঙাল না হিমালয়ের রাণীর। কোলাহল করল না কেউ। বিজ্ঞানীরা বলেন ৮০০০ মিটারের ওপরের উচ্চতায় ক্রমশ কমে আসে অক্সিজেন। তবু এই মরশুমে খানিকটা বুক ভরে নিঃশ্বাস কি নেয়নি এভারেস্ট? কে জানে!