scorecardresearch

দক্ষিণেশ্বরের আদ্যাপীঠ মন্দির, যার সঙ্গে জুড়ে এই সব অলৌকিক কাহিনি

মাত্র ৩৮ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছিলেন এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদা ঠাকুর। আজ তাঁর আবির্ভাব তিথি।

Adhyapeeth
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদা ঠাকুর (ডান দিকে)

বাংলার অতি জনপ্রিয় তীর্থস্থানগুলোর অন্যতম দক্ষিণেশ্বর। এখানে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র ভবতারিণী মন্দির। আর, তার কিছুদূরেই দেবী আদ্যার পীঠস্থান আদ্যাপীঠ। যা প্রসিদ্ধ কালীমন্দিরগুলোর অন্যতম। দেবী কালীই এখানে আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে পূজিতা হন। এই মন্দিরে ওঙ্কারের মধ্যে রয়েছে দেবী আদ্যার মূর্তি। তাঁর নীচে শ্রীরামকৃষ্ণের ধ্যানরত মূর্তি। আর, দেবী আদ্যার ওপরে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি।

এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদাঠাকুর ছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা। পৈতৃক নাম অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য। মায়ের নাম তিলোত্তমা দেবী। বাবা অভয়চরণ ভট্টাচার্য। তিন সন্তানের মধ্যে মধ্যম ছিলেন অন্নদাচরণ। হতে চেয়েছিলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। কলকাতায় কবিরাজি পড়তে এসেছিলেন অন্নদাচরণ। সময়টা ছিল বাংলার ১৩২১ সাল। থাকতেন কলকাতার আর্মহাস্ট স্ট্রিটে এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখান থেকেই বৃত্তি নিয়ে পাশ করেছিলেন কবিরাজি। বন্ধুর বাবার সাহায্যে কবিরাজির ডিসপেনসারির জন্য দোকানও ভাড়া নিয়েছিলেন।

কথিত আছে বাংলাদেশে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বারবার এক সন্ন্যাসীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। চলে আসেন আর্মহাস্ট স্ট্রিটে বন্ধুর বাড়িতে। সেখানেও পান ওই সন্ন্যাসীর স্বপ্নাদেশ। এরপর তিনি স্বপ্নাদেশ পান শ্রীরামকৃষ্ণের। স্বপ্নাদেশে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ইডেন গার্ডেনসে যেতে বলেন। সেখানে ঝিলের পাশে নারকেল এবং পাকুড় গাছের কাছ থেকে কালীমূর্তি নিয়ে আসতে বলেন। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী অন্নদাচরণ ওই ঝিলের পাশ থেকে উদ্ধার করেন আদ্যামূর্তি। পরে দেবী আদ্যার স্বপ্নাদেশে বিজয়া দশমীতে মূর্তিটি বিসর্জন দেন মাঝগঙ্গায়। স্বপ্নাদেশ মতই মূর্তিটির ছবি তুলে রেখেছিলেন তিনি। তা থেকেই তৈরি হয়েছে বর্তমান আদ্যামূর্তি। বাংলার ১৩২৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে স্বপ্নে সন্ন্যাস দীক্ষাও দেন।

আরও পড়ুন- ভক্তদের ভরসাস্থল কালনার ১০৮ মন্দির, মনস্কামনা পূরণের জন্য ভিড় লেগেই থাকে

আদ্যাপীঠের ভোগেও রয়েছে বৈশিষ্ট্য। রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ৩২সের চালে রান্না হয়। দেবী আদ্যার জন্য সাড়ে ২২ সের চাল বরাদ্দ রয়েছে। রামকৃষ্ণ পরহংসদেবের ভোগ রান্না হয় সাড়ে ১২ সের চালে। সেই ভোগ পঞ্চব্যঞ্জনে নিবেদন করা হয়। এর সঙ্গে পরমান্ন ভোগও থাকে। অন্নদা ঠাকুরের নির্দেশ ছিল, বৃহৎ ভোগ মন্দিরে যাবে না। মন্দিরের পাশে ভোগালয়ে তা সাজিয়ে দেওয়া হবে। সেখানেই নিবেদন করা হবে ভোগ। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কেবল পরমান্ন ভোগ যাবে দেবীর কাছে। আজও সেই নিয়ম মানা হয় আদ্যাপীঠে। রাতে হয় অমৃতভোগ। যা ঘি এবং উৎকৃষ্ট চাল দিয়ে তৈরি।

অন্নদা ঠাকুরই ঠিক করে গিয়েছিলেন, মন্দিরের আয় থেকে বালকের জন্য ব্রহ্মচর্যাশ্রম। বালিকাদের জন্য তৈরি হবে আর্য নারীর আদর্শ শিক্ষাদান কেন্দ্র। সংসারবিবাগী গৃহস্থের জন্য তৈরি হবে বাণপ্রস্থাশ্রম। আর সংক্রামক ব্যাধি নিবারণের চেষ্টা বা হাসপাতাল তৈরি করা হবে। বাংলার ১৩৩৫ সালে অন্নদা ঠাকুর পুরীতে প্রয়াত হন। কিন্তু, তাঁর ভক্ত ও শিষ্য ও ব্রহ্মচারীরা সেই নির্দেশ মানছেন অক্ষরে অক্ষরে। এখানকার অ্যাম্বুল্যান্সে তৈরি হয়েছে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসালয়। যেহুতু অন্নদাঠাকুর সংক্রামণ ব্যাধির চিকিৎসা করতে বলেছিলেন, তাই আদ্যাপীঠের অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে সংক্রামক ব্যাধির জন্য নয়, কথাটি আজও লেখা থাকে না।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Every day many people rush to this temple in the hope of peace