মাঝবয়সে হাঁটু-কোমরের ব্যথায় কাবু হওয়ার সমস্যা এখন প্রায় ঘরে-ঘরে। বিশেষ করে মহিলাদের একটি বড় অংশ চল্লিশ পেরোলেই প্রকট এই সমস্যায় দরুণ ভুগতে থাকেন। দিনের পর দিন ডাক্তার দেখিয়েও সুরাহা যেন মিলতেই চায় না। বরং দিন যত এগোয় হাঁটু-কোমরের ব্যথায় চলা-ফেরা করাই দায় হয়ে পড়ে। প্রকট এই সমস্যা এড়াতে তাই শুরু থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পরামর্শ দিলেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিকিৎসক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, মহিলাদের একটি অংশের ক্ষেত্রে হাঁটু-কোমরের ব্যথা চল্লিশের পর বেশি ভোগায়। এক্ষেত্রে অনেকের অস্টিওআর্থারাইটিসের একটি সমস্যা তৈরি হয়। দুটো হাঁটুর মাঝে কার্টিলেজ থাকে। কার্টিলেজের সেলের মধ্যে একটা সময় পর আস্তে-আস্তে জলের অংশ শুকিয়ে আসে। নতুন করে সেল তৈরি হয় না, তাতেই হাড় ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। বয়স চল্লিশ পেরোলে এই সমস্যা শুরু হতে পারে।
চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, চল্লিসের পর থেকে মহিলাদের মেনোপোজের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে হরমোনাল একটা সমস্যা হয়। মহিলাদের অস্টিওপরোসিসের সমস্যা তৈরি হয়। হাড় দুর্বল হয়ে যায়। দুর্বল হাড় ও কার্টিলেজ- দুই মিলে হাড়ের সমস্যা তীব্র আকার নেয়।
হাঁটু-কোমরের ব্যথায় মহিলারাই বেশি কাবু হন কেন?
চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যেপাধ্যায়ের মতে, যে কোনও পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মাটিতে বসে বেশি কাজ করতে হয়। বাড়ির দৈনন্দিন নানা কাজের জন্য হাঁটু মুড়ে বা বাবু হয়ে মহিলারাই বেশি বসেন। তারই জেরে হাড় বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে ওজন বেড়ে গেলে সমস্যা তীব্র আকার নিতে শুরু করে। যাঁরা হাঁটু বা কোমর বা শিরদাঁড়ার হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার প্রাথমিক অবস্থা রয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে ওজন বাড়লে সমস্যা মারাত্মকভাবে বাড়ে।
হাঁটু-কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তির পথ কী?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন, চিন্তাটা শুরু করতে হবে অল্প বয়স থেকেই। দেখতে হবে ছোট থেকেই বাচ্চার ওজন যাতে বেড়ে না যায়। নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্যে থাকলে সুফল মিলবে। খাদ্যাভ্যাসও ঠিক করতে হবে। ফাস্ট ফুড, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস বেশি না খাওয়াই ভালো। এই খাবারগুলিতে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়। মোটের উপর, ছোট থেকেই একটি হেল্দি ডায়েটে থাকা দরকার। সূর্যের আলোয় থাকতে হবে নিয়ম মেনে।
যাঁদের হাঁটু-কোমরের ব্যথার সমস্যা রয়েছে, তাঁরা হাঁটু মুড়ে বা বাবু হয়ে বসবেন না। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়াবেন না। সিঁড়ি দিয়ে বেশি ওঠানামা করবেন না। বাড়িতে এমনভাবে থাকুন যাতে বেশি মাটিতে বসতে না হয়। কোমোড ব্যবহার করুন। এগুলো মেনে চললে হাড়ের ক্ষতি কম হয়। এরই পাশাপাশি যাঁদের ক্ষেত্রে অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা যেমন থাইরয়েড, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও রোগ রয়েছে, প্রথমে সেগুলি নিয়ন্ত্রণে আনুন। নিয়মিত ব্যায়ামের মধ্যে থাকলে সুফল মিলবে। মাঝে মাঝে ফিজিওথেরাপি চলতে পারে। যতদিন সম্ভব এটা চালান।
নি-রিপ্লেসমেন্ট বা হাঁটু প্রতিস্থাপনের কথা কখন ভাববেন?
চিকিৎসক উজ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন নি-রিপ্লেসমেন্টের ভাবনা একেবারে শেষে আসতে পারে। অর্থাৎ একটা সময় পর যখন দেখা যাবে কোনও কিছুতেই ফল মিলছে না, দৈনন্দিন কাজ করতেই সমস্যা হচ্ছে এবং যখন ওই ব্যক্তির বয়স ৫৫-৬০ বছরের কাছে পৌঁছোচ্ছে তখনই নি রিপ্লেসমেন্টের কথাটা বলা হয়। যদিও ওই বয়সের আগেও সমস্যা প্রকট আকার নিলে তাও প্রথমেই নি রিপ্লেসমেন্ট না করে অন্য কয়েকটি অপারেশনের কথা ভাবা হয়। যেমন হাঁটু বেঁকে গেলে তা ঠিক করার জন্য অপারেশন করা যায়। তুলনামুলক কম বয়সে এটা করা হয়।