রাজ্যের জাগ্রত শিব মন্দিরগুলোর মধ্যে বিখ্যাত কালনার ১০৮ মন্দির। পূর্ব বর্ধমানে ভাগীরথী নদীর তীরে কালনার এই সব শিব মন্দির। বর্তমানে যা আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান তো বটেই। হিন্দুদের কাছেও ধর্মীয় স্থান হিসেবে অম্বিকা কালনার অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান এই ১০৮ শিব মন্দির। ভক্তদের কাছে এই স্থান নব কৈলাস নামেও পরিচিত।
এখানে সাদা এবং কালো দুই প্রকার শিবলিঙ্গই দেখতে পাওয়া যায়। রীতিমতো পর্যায়ক্রমে রয়েছে শিবলিঙ্গগুলো। বহির্বৃত্ত এবং অন্তর্বৃত্তে নবরত্ন মন্দিরগুলো সাজানো। প্রতিটি মন্দিরই আটচালা গঠনশৈলির। যার বাইরের বৃত্তে একটি সাদা শ্বেত মার্বেলের শিবলিঙ্গ ও একটি কালো কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ পর্যায়ক্রমে সাজানো আছে। আর ভিতরের বৃত্তে সবগুলোই সাদা বা শ্বেত মার্বেলের শিবলিঙ্গ। সাধারণত, কালো পাথরের শিবলিঙ্গই দেখা যায়। কিন্তু, এখানে তা ব্যতিক্রম।
এই মন্দির চত্বরের বাইরের বৃত্তে আছে ৭৪টি শিবমন্দির ও ভিতরের বৃত্তে আছে ৩৪টি শিবমন্দির। মন্দিরগুলোর টেরাকোটার কাজ অপূর্ব। মন্দিরগুলোর গায়ে রামায়ণ, মহাভারতের নানান বাণী খোদাই করা আছে। ভিতরের মন্দিরগুলো ও বাইরের মন্দিরের নিয়মিত পরিচর্যা চলে। মন্দির চত্বরে রয়েছে হরেকরকম ফুলের বাগান। কোনও একসময় ১২ জন পূজারি ওই মন্দিরে নিত্যসেবায় নিযুক্ত ছিলেন। তবে, এখন সেসব অতীত। যদিও মন্দিরে নিত্যপুজো এখনও আগের মতই চলছে। শিবরাত্রির দিন মন্দিরকে সাজানো হয়। যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন।
আরও পড়ুন- শিব-পার্বতীর ছেলে বলে নয়, সন্তানলাভে কার্তিক পুজো হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে
ইতিহাস বলে, ১৮০৯ সালে এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন বর্ধমানের মহারাজা তেজ বাহাদুর। তিনি ছিলেন শিব ভক্ত। শিবের ধ্যান করার সময় তাঁর মনে এসেছিল মন্দির তৈরির ভাবনা। অন্যমতে, মহারাজা ১০৮টি রুদ্রাক্ষের মালায় শিবের মন্ত্র জপ করছিলেন। সেই সময় তাঁর মনে এসেছিল মন্দির তৈরির চিন্তা।
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা অবধি মন্দির খোলা থাকে। আবার বিকাল ৪টে থেকে রাত ৯টা অবধি খোলা থাকে এই মন্দির। এর কোনও প্রবেশমূল্য নেই। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে এসে শিবের পুজো দেন। নানা মানত করেন। আর, ভক্তদের বিশ্বাস কালনার এই মন্দিরে মানত করলে, ভগবান ভোলানাথ তাঁদের ফেরান না।