হুগলি নদীর ধারে কালীমন্দির। কথিত আছে, এই দেবীমূর্তি ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ এক সাধকের। কেষ্ট পাত্র ওরফে বিশু নামে এক ডাকাত সর্দারের দলবল সেই মূর্তি লুঠ করে। কিন্তু, দেবীমূর্তি লুঠ করায় অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই ডাকাত সর্দার। সেই সময় দেবী স্বপ্নাদেশ দেন যে, তিনি এখানেই পূজিত হবেন। সেই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর ডাকাত সর্দার বিশু দেবী মূর্তিকে স্থানীয় সাধকের হাতে তুলে দেন।
এখানে দেবী চতুর্ভুজা, খড়গধারিণী, মুণ্ডমালিনী। দেবীর জিহ্বা সোনার তৈরি। কিন্তু, এখানকার কালীমূর্তির বিশেষত্ব যে এখানে দেবী কালীর পায়ের তলায় মহাদেব নেই। অন্যান্য জায়গায় যেমন দেবীকালীর মূর্তির পায়ের তলায় ভগবান শিবকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়, এখানে তেমনটা নয়।
কথিত আছে, স্বামী বিবেককানন্দ শিকাগো থেকে ফেরার সময় এই মন্দির দর্শন করেছিলেন। এই কালীর দৈর্ঘ্য মাত্র একহাত, তৈরি কষ্টিপাথরে। আকারে ছোট বলে দেবীর নাম খুকিকালী। বজবজে এই মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল ইংরেজির ১৮৯২ সালে। পরে সেই জায়গার নাম হয়েছে বজবজ কালীমন্দির। আর ডাকাতরা যে সাধকের হাতে মূর্তিটি তুলে দিয়েছিল, তাঁর নাম দয়াল ঠাকুর।
আরও পড়ুন- রাস্তার মাঝখানে, ভাঙতে ভয় পেয়েছিলেন স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধীও, এতই জাগ্রত লালমন্দির
কথিত আছে ডাকাতদের হাত থেকে দেবীকে পাওয়ার পরবর্তী অমাবস্যায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে খুকি কালীকে স্থাপন করেছিলেন দয়াল ঠাকুরের গুরু স্বামী পূর্ণানন্দ। সেই থেকে আজও এখানে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পুজো হয়ে আসছে দেবী খুকি কালীর। কথিত আছে, মূর্তিটি দেখে দয়াল ঠাকুরের সন্দেহ হয়েছিল, এ নিশ্চয়ই কোনও রাজবাড়ির প্রতিমা।
দয়াল ঠাকুরের সেই রহস্যের উদ্ঘাটন করেছিলেন স্বামী পূর্ণানন্দ। কথিত আছে এই মূর্তিটি বর্ধমানের রাজা সাধক কমলাকান্তের জন্য তৈরি করে দিয়েছিলেন। মূর্তিটি ছিল বর্ধমানের এক মন্দিরে। যেখানে সাধক কমলাকান্ত দেবীর আরাধনা করতেন। সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম বর্ধমানের চাঁপা গ্রামে। পরবর্তীতে তিনি বর্ধমানের রাজাদের গুরুদেব হয়েছিলেন। আর, সাধক কমলাকান্তের মূর্তি মানেই যে জাগ্রত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি সর্বসমক্ষে দেবীমূর্তির পায়ে কাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বের করে দেখিয়েছিলেন। জাগ্রত দেবী খুকিকালীর কাছে মনস্কামনা পূরণের জন্য তাই ভিড় করেন অসংখ্য ভক্ত।