প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন নবদ্বীপের বুড়ো শিবের মূর্তি। এখানে গিয়ে শিবের কাছে প্রার্থনা করলে, অচিরেই পূরণ হয় সেই প্রার্থনা। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। শুধু তাই নয়, কথিত আছে বুড়োশিবের কাছে প্রার্থনা করলে দূর হয়ে যায় যাবতীয় কলঙ্ক। নিঃসন্তান দম্পতি এই মন্দিরে গিয়ে বুড়োশিবের কাছে প্রার্থনা করলে কোলে সন্তান আসে। দূর হয়ে যায় যাবতীয় রোগব্যাধি। পাশাপাশি, যে কোনও সমস্যায় চটজলদি মেলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। এমনকী, যাদের বিয়ে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়, তারাও সেই সমস্যা দূর করতে এই মন্দিরে ছুটে যান।
আর, এসব বুড়োশিবের দরবারে নতুন কিছু নয়। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বিজয়রামসেন বিশারদ তাঁর তীর্থমঙ্গলে বুড়ো শিবের উল্লেখ করে গিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'নবদ্বীপে বুড়োশিব আর নিত্যানন্দে। উদ্দিশে প্রণাম করি চলিলা আনন্দে।' শুধু বিজয়রামসেনই নন। বুড়োশিবের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে গৌরচরিত চিনতামণি গ্রন্থে। আবার নরহরি চক্রবর্তী রচিত শ্রীশ্রী গৌরচরিত চিন্তামণি গ্রন্থে বলা আছে, 'যা সবারে সদা শাশুড়ি, ননদ, পতি আদি সব পাড়য়ে গালি। প্রতিদিন বুড়োশিবে পূজে কত আদরে কলঙ্ক হইবে বলি।'
শুধু তাই নয়। নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় শিবের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। বাসন্তীপুজোর দশমীর ভোরে বিয়ে হত বুড়োশিব আর যোগনাথ শিবের। এখনও সেই বিয়ের যাবতীয় রীতিনীতি মেনেই সম্পন্ন হয় বুড়োশিবের বিয়ে। এই বিয়ের উৎসব উপলক্ষে বিশাল আয়োজনের বন্দোবস্ত থাকে। ভক্তদের ধারণা, শিবের বিয়ের এই অনুষ্ঠানে মাধ্যমে বহু অমঙ্গল দূর হয়। পাশাপাশি, অবিবাহিতদের বিয়ের বাধাও কেটে যায়।
আরও পড়ুন- অসংখ্য ভক্তের ভরসার কেন্দ্র গোকর্ণের শ্যামরায় কালী, জাগ্রত দেবী পূরণ করেন মনস্কামনা
ইতিহাস বলে, নবদ্বীপে বুড়োশিবের আদি প্রাচীন মন্দিরটি নবদ্বীপ পৌরসভার প্রথম কমিটির সদস্য কৃষ্ণকান্ত শিরোমণি ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তারাপ্রসন্ন চূড়ামণির চেষ্টায় বর্তমান 'নবরত্ন' মন্দিরটি নির্মিত হয়। এই নির্মাণকাজে উৎসাহিত হওয়ার পিছনে ছিল ভক্তদের ব্যাপক সংখ্যায় ভিড়। মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা বুড়ো শিবের কাছে আসা শুরু করেন। তার ফলেই প্রয়োজন হয় মন্দির নির্মাণের।