বাংলার অন্যতম জেলা হল বাঁকুড়া। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাঁকুড়া নানা কারণে বিখ্যাত। তার মধ্যে অন্যতম হল টেরাকোটার কাজ। এখানকার মন্দির এবং সংগীত জগতের পরিচিত ভারতজোড়া। সেই বাঁকুড়াতেই হয় এমন এক পুজো, যেখানে দেবী ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ তো করেনই। পাশাপাশি, দেবীর কৃপায় শিক্ষাক্ষেত্রে যাবতীয় বাধাও দূর হয়ে যায়। ভক্তরা এই দেবীকে বলেন মহাসরস্বতী।
বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের কালাবতী গ্রামে এই পুজো হয়। এখানে আলাদা করে দুর্গাপুজো বা কালীপুজো হয় না। এখানকার বাসিন্দারা অতি প্রাচীনকাল থেকেই দেবী মহাসরস্বতীর পুজো করে থাকেন। দেবী এখানে অষ্টভুজা। তাঁর প্রত্যেক হাতেই রয়েছে অস্ত্র। দেবীর গায়ের রং নীল। তিনি বাঘের পিঠে চেপে বধ করেছেন শুম্ভ ও নিশুম্ভকে। দেবীর পায়ের তলায় কাটা মুণ্ড। মাথার ওপর রয়েছেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও ইন্দ্র। দেবীর দু'পাশে জয়া ও বিজয়া। এমনই রূপের পুজো হয় এখানে।
এই পুজো হয় দীপাবলির রাতে। মোট তিন দিন ধরে চলে পুজো। দীপাবলির সারারাত মহাসরস্বতীর পুজোর পর ভোররাতে হয় বলি। পরদিন সকালে হয় কুমারী পুজো ও হোমযজ্ঞ। এরপর হয় চণ্ডীপাঠ। তৃতীয় দিনে চণ্ডীপাঠের পর হয় সিঁদুরখেলা। তারপর দেবীর ঘটবিসর্জন হয়। তবে, এখানে প্রতিমা বিসর্জন হয় না। প্রতিমা মন্দিরেই বছরভর থাকেন। কারণ, এখানে প্রতি অমাবস্যায় দেবীর পুজো হয়। পুরোনো প্রতিমা প্রতিবছর মহালয়ার দিন বিসর্জন হয়।
আরও পড়ুন- কৃষ্ণনগরের জাগ্রত উগ্রতারা, যেখানে দেবীকে বেঁধে রাখা হয় লোহার শিকল দিয়ে
এই পুজোর পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। কথিত আছে কালাবতী গ্রামের রামলাল চৌধুরী বিন্ধ্যপর্বতে গিয়ে দেবী বিন্ধ্যবাসিনীর দর্শন করেছিলেন। সেখানেই তিনি পুজোর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। এরপর গ্রামে ফিরে তিনি পুরোহিত রামরতন মুখুটিকে ডেকে ঘট পেতে দেবীর পুজো শুরু করেন। আবারও স্বপ্নাদেশ পেয়ে রামলাল চৌধুরী বড়জোড়া গ্রামের এক মৃৎশিল্পীকে প্রতিমা তৈরির নির্দেশ দেন।
স্বপ্নাদেশেই দেবীর গায়ের রং ও রূপ বলে দেওয়া হয়েছিল। সূর্যাস্তের সময় যেমন আকাশের রং হয়, এখানেও প্রতিমার গায়ের রং ঠিক তেমনই। প্রথমে এই পুজো ছিল মূলত তাম্বুলি সম্প্রদায়ের। পরে এই পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দেবীর মাহাত্ম্য দেখে এখন সকলে এই পুজোয় অংশ নেন। বর্তমানে এই পুজো পরিচালনা করে কালাবতী সর্ব ষোলআনা কমিটি।