দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার মহামায়াতলা। গত ৩৫০ বছর ধরে এখানে রয়েছে দেবী মহামায়ার মন্দির। দেবীর নাম অনুসারেই জায়গাটির নাম মহামায়াতলা। কথিত আছে বাংলার ১২১০ সালে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। তৎকালীন জমিদার দুর্গারাম কর চৌধুরী স্বপ্নে এক বীণাবাদনরতা দেবীকে দেখেছিলেন। তিনি দৈববাণীর মত স্বপ্নে ওই দেবীর থেকে শুনেছিলেন, দেবী মহামায়া গঙ্গার জলে ডুবে রয়েছেন। তাঁকে নিয়ে এসে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে দেবী নির্দেশ দিচ্ছেন।
স্বপ্নাদেশেই জমিদার জানতে পেরেছিলেন, দেবী গঙ্গার কোথায় ডুবে রয়েছেন। এরপর নৌকো নিয়ে পরদিনই সেই জায়গার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন জমিদার দুর্গারাম। স্বপ্নে দেখা জায়গায় গিয়ে তিনি দেখা পান গোরাচাঁদ ঘোষাল নামে এক পুরোহিতের। তাঁর থেকে জানতে পারেন, ওই পুরোহিতও দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েই তাঁকে নিতে এসেছেন। যৌথ প্রচেষ্টায় গঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় নিমকাঠের দেবী মহামায়ার বিগ্রহ।
প্রথমে অস্থায়ীভাবে দেবীকে দুটি পাথরখণ্ডের ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে নবনির্মিত মন্দিরে জমিদার দুর্গারাম চৌধুরী দেবী মহামায়ার মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সূত্র ধরে জায়গাটির নাম হয় মহামায়াপুর। পরে তা লোকমুখে হয়ে যায় মহামায়াতলা। প্রায় ৩৬৫ বিঘা জমি দেবোত্তর করে পুরোহিত গোরাচাঁদ ঘোষালের পরিবারকে দেবী মহামায়ার নিত্যপুজোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন দুর্গারাম। বর্তমানে এই মন্দিরে ঘোষালদের দৌহিত্র পরিবার চক্রবর্তীরা দেবীর নিত্যসেবার দায়িত্বে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- জাগ্রত দেবী মাকড়চণ্ডী, ভক্তের তিরস্কারে শিলাখণ্ডের অর্ধেক প্রবেশ করেছে পাতালে
ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী মহামায়া, টালিগঞ্জের দেবী করুণাময়ী, বোড়ালের ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী সম্পর্কে পরস্পরের বোন। মহামায়া মন্দিরে প্রতিবছর ২৩ জানুয়ারি বিশাল আকারে বাৎসরিক পুজো হয়। এখানে নীলপুজোও বেশ বড় আকারে হয়ে থাকে। ভক্তদের দাবি, অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবী মহামায়া। দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে তা পূরণ হয়। এই মন্দিরের পরিবেশও বেশ শান্ত। যেখানে এলে মন শান্ত হয়ে যায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। বাৎসরিক এবং বিশেষ পুজোর দিনগুলোয় এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন, সাধ্যমতো পুজো দেন। কাছাকাছি এলাকার ভক্তরা আবার মানসিক শান্তির জন্য এই মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত করেন।