রানাঘাটের কাছে মাঝেরগ্রাম গরিবপুর কালীবাড়ি। রানাঘাট-বনগাঁ লাইনের ট্রেনে মাঝেরগ্রাম স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে এই মন্দিরে যাওয়া যায়। পাশাপাশি মাঝেরগ্রাম স্টেশন থেকে টোটো চেপেও যাওয়া যায় এই কালীবাড়িতে। দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই জাগ্রত মন্দিরে। পাশাপাশি, বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিও গোপনে এই মন্দিরে আসেন পুজো দিতে। আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছরের আগে তৈরি হয়েছিল এই কালীমন্দির। যা তৈরি হওয়ার পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। যে ইতিহাস বাংলার শক্তিসাধনার নিরন্তর চর্চাকেই তুলে ধরেছে।
কথিত আছে, গরিবপুরের বাসিন্দা জমিদার তথা ডাক্তার যদুনাথ মুখোপাধ্যায়ের বড় ছেলে কুমারনাথ মুখোপাধ্যায় ছেলেবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে তিব্বত চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিব্বতি তন্ত্রসাধনায় দীক্ষা নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। যদুনাথ মুখোপাধ্যায় ছেলের বিয়ে দিলেও কুমারনাথ তাঁর তন্ত্রসাধনা ছাড়েননি। স্থানীয় বরকনেতলায় ধ্যানমগ্ন থেকে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন নতুন নাম, স্বামী ব্রহ্মানন্দ নামে। তিনিই জাগ্রত এই গরিবপুর কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।
এখানে দেবী শিবের বুকে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। আর, চোকৌ আসনের নীচে পাঁচটিরও বেশি মৃত মানুষের খুলি রয়েছে। ভক্তদের দাবি, এই খুলিগুলো অতি প্রাচীন। এখানে দেবীর মূর্তির পিছনে রয়েছে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি। দেবীমূর্তি ঢাকা না-থাকায়, যে কোনও সময় দর্শন করতে পারেন ভক্তরা। তবে, এখানে দেবীর ছবি তোলা নিষিদ্ধ। দেবীর ছবি ঘরে রাখাও বারণ। যাঁরা সেই ছবি ঘরে রেখেছেন, তাঁদের জীবনে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এমনটাই দাবি এই মন্দিরের সেবায়েত মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের।
আরও পড়ুন- আর উত্তরপ্রদেশে ছুটতে হবে না, বাংলাতেই গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় বৃন্দাবন
এখানে দেবীর মন্দিরের পিছনেই অবস্থান করছেন জোড়া শিবলিঙ্গ। ভক্তদের দাবি, দেবী নিজে স্বপ্নাদেশে মন্দিরের আশপাশে বাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তাই, এই মন্দিরের আশপাশে কোনও বাড়ি নেই। বরং, মন্দিরের আশপাশ গাছগাছালিতে ভরা। সেই গাছে ভক্তরা মনোবাসনা জানিয়ে ঢিল বাঁধেন। আর, মনোবাসনা পূর্ণ হলে তাঁরা এসে ঢিল খুলে দিয়ে যান। মন্দিরের পাশেই রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরের জল দিয়ে মাটির বিগ্রহকে স্নান করানো হয়। ২৫০ বছর ধরে একই বিগ্রহ রয়েছে এই মন্দিরে। প্রতিমার বিসর্জন এখানে হয় না। এখানকার অপর রীতি হল, গঙ্গার জল পুজোর কাজে ব্যবহার করা হয় না। সব কাজে ব্যবহৃত হয় মন্দিরের পাশের 'পবিত্র' পুকুরের জলই।