কথায় আছে হিন্দুদের ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। কিন্তু, এ এমন এক মন্দির, যেখানে ১২ মাসে ২৬ পার্বণ। আর, এই সব পার্বণ চলে একই মন্দির চত্বরে। যেখানে ছিন্নমস্তা থেকে দুর্গা, বিভিন্ন মন্দির থাকলেও মূল মন্দির একটিই। তা হল মাণিকেশ্বর শিব মন্দির। যেখানে বছরভর মনস্কামনা পূরণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, ভিনরাজ্য থেকেও ভক্তরা ছুটে আসেন এই মন্দিরে পুজো দিতে, মনস্কামনা পূরণের আশায়। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে ভগবান শিবশংকর অত্যন্ত জাগ্রত। মনস্কামনা পূরণ হলে ভক্তরা এখানে অর্থদান করেন। সেই অর্থেই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুজোপাঠ চলে বছরভর।
আসানসোল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দামোদর নদের তীরে এই প্রাচীন শিবমন্দির। জায়গাটা বার্নপুরের মধ্যে পড়ে। কথিত আছে, পুরুলিয়ার কাশীপুরের মহারাজ মহাদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দিরের জন্য কয়েক বিঘা জমি রজনীকান্ত ব্রহ্মচারী নামে এক সাধককে দান করেছিলেন। কোনও এক ২৯ চৈত্র কাশীপুরের মহারাজা এই স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। রাজার ইচ্ছামত এখানে মন্দির তৈরি হয়। শিবমন্দিরের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয় অন্যান্য মন্দির। চলতে থাকে পুজোপাঠ। শোনা যায়, সেই সময় সেবায়েত রজনীকান্ত ব্রহ্মচারী ৩৪ হাজার টাকা দিয়ে লখনউ থেকে পিতলের রথ আনিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- জাগ্রত বড়মা পূরণ করেন মনস্কামনা, ‘জীবন্ত দেবী’কে নিয়ে প্রচলিত নানা অলৌকিক কাহিনি
বছর পাঁচেক আগে এই মন্দির থেকে রথ চুরি যায়। তারপরে এখানে লোহার রথ কেনা হয়। তা দিয়েই হয় রথযাত্রা উৎসব। ভক্তদের দাবি, এখানকার চুরি যাওয়া রথ হীরাপুর থানায় জমা আছে। রজনীকান্ত ব্রহ্মচারী মারা গেলে এই মন্দিরে সেবায়েতের দায়িত্ব পান হরিপদ চক্রবর্তী। পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পান তাঁদেরই বংশধর হারাধন চক্রবর্তী। তাঁর প্রয়াণের পর বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েত হলেন পূর্ণিমা চক্রবর্তী। এখানকার মন্দির চত্বরেই রয়েছে কদমগাছ। সেখানে অলৌকিক ভাবে বছরে মাত্র একটি দিন ফুল ফোটে। আর, সেই ফুলই গাজনের মেলায় শিবের মাথায় দেওয়া হয়।