তেভাগা আন্দোলনের জমি। রাজ্যের জমি আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে নন্দীগ্রামের নাম সকলেই জানেন। কিন্তু, এছাড়াও নন্দীগ্রামের এক বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। তা হল, এখানেই রয়েছে অতিজাগ্রত এক শিবমন্দির। বহু প্রাচীন এই মন্দির তৈরি হয়েছিল বাংলার সেন যুগে। মন্দিরটি নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায়। মেদিনীপুরের কর্ণগড়ের রাজা যশবন্ত সিংয়ের রাজসভার কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে শিবসংকীর্তন গীতিকাব্য লিখেছিলেন। এই গীতিকাব্যে রায়াপাড়াকে তিনি পোতাশ্রয় বা বন্দর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেই রায়াপাড়াতেই রয়েছে অতিজাগ্রত শ্রী শ্রী মহারুদ্র সিদ্ধনাথ শিবঠাকুর জিউ মন্দির।
দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে ওঠা এই মন্দির দৈর্ঘ্যে ২৩ ফুট। এর উচ্চতা ৫০ ফুট। কথিত আছে, এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ প্রতিবছর একটি ধানের সমান উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। অতিজাগ্রত মন্দির হওয়ায়, সারাবছর এই মন্দির চত্বরে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। বিয়েবাড়ি থেকে মস্তকমুণ্ডন, হালখাতা থেকে বড় পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের কলম পূজা দেওয়ার রীতি রয়েছে এই মন্দিরে। স্থানীয় মানুষজন তো বটেই, সারাবছর এখান দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন।
আরও পড়ুন- রহস্যে ভরা এক্তেশ্বর, বাংলার অন্যতম শৈবতীর্থ, মনস্কামনা পূরণের মন্দির
ভক্তদের বিশ্বাস, মহারুদ্র সিদ্ধনাথ শিবঠাকুর জিউয়ের কাছে মানসিক করলেই মনস্কামনা পূরণ হয়। শুধু সাধারণ মানুষই নন। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিও জাগ্রত হওয়ার কারণে রেয়াপাড়ার এই শিবমন্দিরে ছুটে যান। মুখ্যমন্ত্রী থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা পর্যন্ত সময়-অসময়ে ছুটে যান এই মন্দিরে। মন্দিরের পাশে রয়েছে পুকুর। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই পুকুর আসলে শিবের রসকুণ্ড। এই পুকুরের সৃষ্টি নিয়ে স্থানীয়স্তরে বহু কাহিনি আছে। পুকুরটির পাড়ে আছে বেশ কয়েকটি পুজোর সামগ্রীর দোকান। তাই পুজোর সামগ্রী পেতে ভক্তদের অসুবিধা হয় না।
এই মন্দিরে আসতে হলে নন্দকুমার থেকে দিঘাগামী বাসে আসতে হয় চণ্ডীপুর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাসে চেপে আসতে হয় রেয়াপাড়ায়। মন্দির কল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয়েছে দোতলা এসি গেস্টহাউস। নাম রেয়েপাড়া শ্রীশ্রীমহারুদ্র সিদ্ধনাথ শিবঠাকুরজিউ মন্দির অতিথি নিবাস। ফলে দূর-দূরান্তের ভক্তদের এখানে থাকতেও কোনও অসুবিধা হয় না।