কলকাতার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র বড়বাজার। এখানকার বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই অবাঙালি। আরও ভালো করে বললে মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের। যাঁরা বাঙালিদের মত দুর্গা বা কালী পুজোর চেয়েও রাম, হনুমান ও শিবের উপাসনায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে তাঁরা বিশেষ ভক্তি রাখেন হনুমানের ওপর। কারণ, হনুমান অসাধ্য সাধন করে থাকেন বলেই অবাঙালি এই ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগের বিশ্বাস।
আর, এই বিশ্বাসকে সম্বল করেই ৩৫০ বছর আগে রাজাকাটরায় তৈরি হয়েছিল হনুমান মন্দির। রাজাকাটরা বড়বাজারের অংশ। শহর কলকাতার তেল, ডাল এবং মশলাপাতির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার এই রাজা কাটরা। এখানে রয়েছে সেই অতি প্রাচীন বিখ্যাত হনুমান মন্দির। শুধু কলকাতাই নয়, গোটা ভারতের প্রাচীন হনুমান মন্দিরগুলোর অন্যতম এই রাজাকাটরার মন্দির।
এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য যে তা দক্ষিণমুখী। এখানকার আরাধ্য দেবতা হনুমানের পাঁচ মুখ। বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এই মন্দিরটি হল সিদ্ধিদাতা হনুমান মন্দির। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই মন্দিরে নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে। বিশেষ করে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই মন্দির ভক্তদের ভিড়ে ঠাসা থাকে।
ভক্তদের দাবি, এই মন্দিরে এসে সিদ্ধিদাতা হনুমানের আরাধনা করলে তিনি যাবতীয় প্রার্থনা পূরণ করেন। আর, সেই কারণেই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান। ব্যবসায়ীরা তাঁদের আর্থিক আমদানি কম হলেই ছোটেন এই মন্দিরে। অথবা কোনও বিপদে পড়লেই ওই মন্দিরে গিয়ে পুজোপাঠ করান। তাঁদের এতটাই বিশ্বাস রাজাকাটরার এই মন্দিরের প্রতি।
আরও পড়ুন- নবদ্বীপের বুড়ো শিব মন্দির, যেখানে গেলে ভক্তদের অন্য মন্দিরের দরকার পড়ে না
হনুমানের যে পঞ্চমুখ, তা হল- বরাহ, নরসিংহ, হয়গ্রীব, গরুড় আর হনুমানের নিজস্ব রূপ। এই পঞ্চমুখের সাহায্যেই পাতালে মহীরাবণ ও অভিরাবণকে বধ করে রাম-লক্ষ্মণকে উদ্ধার করেছিলেন হনুমান। এই রূপে হনুমান সিদ্ধিপ্রদায়ক। এমনটাই বলা হয়ে থাকে। সেই কথা মাথায় রেখেই তৈরি রাজাকাটরার এই হনুমান মন্দিরের বয়স তিন শতাব্দী পেরিয়ে গিয়েছে। আর, এই তিন শতাব্দী ধরেই বিভিন্ন মাড়োয়ারি পরিবার যারা বংশ পরম্পরায় বড়বাজারে ব্যবসা করে আসছেন, তাঁরা ওই মন্দিরে যাতায়াত করে।