কালীতীর্থ কালনা। অন্যান্য দেব--দেবীর পাশাপাশি কালনাবাসী বরাবরই মেতেছে শক্তিসাধনায়। দেবী কালীর আরাধনায়। সেই কারণে বহু প্রাচীন গ্রন্থ কালনাকে তন্ত্রসাধনার পীঠস্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যে পীঠস্থানের মূলকেন্দ্র দেবী সিদ্ধেশ্বরীর মন্দির।
কবে, এই মন্দির তৈরি হয়েছিল, তার সময় আজও জানেন না কালনাবাসী। প্রাচীন এই মন্দির পলাশির যুদ্ধের ১৭ বছর সংস্কার করিয়েছিলেন বর্ধমানের জমিদার চিত্রসেন। অবশ্য ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, মাতৃসাধক অম্বরীশ এখানে দেবীর আরাধনা করতেন।
সেই সূত্রেই নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল এই মন্দিরের দেবীমূর্তি। দেবী এখানে বামাকালী রূপে বিরাজিত। তিনি শবরূপী শিবের ওপর ভয়ঙ্করী রূপে দণ্ডায়মান। এখানে বছরভর দেবীকে দর্শন করা গেলেও কোজাগরী পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণাপঞ্চমী থেকে ত্রয়োদশী পর্যন্ত সময়ে এই মন্দিরে দেবী দিগম্বরী রূপে বিরাজ করেন। এই সময়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। পুজো যা হয়, বাইরে থেকে।
আরও পড়ুন- সাত শতকের বড়মা কালী মন্দির, জাগ্রত দেবীতে বংশপরম্পরায় অগাধ ভরসা ভক্তদের
এই মন্দিরের বাইরে রয়েছে রহস্যময় পুকুর। যাকে অম্বিকা পুকুর বলা হয়। কথিত আছে, এই পুকুরের জলে এককালে রাখা থাকত বাসনপত্র। স্থানীয় দুঃস্থ বাসিন্দারা মেয়ের বিয়ে থেকে সামাজিক নানা কাজে সেই সব বাসনপত্র ব্যবহার করতেন। ব্যবহারের পর ফের অন্য কারও কাজে লাগতে পারে, এই কামনায় পুকুরের জলের মধ্যেই বাসনপত্র রেখে যেতেন। আবার, এই পুকুরের জল দিয়েই সারা হত মন্দিরের নানা কাজকর্ম। আগে এখানে বলি প্রথা চালু ছিল। সেই সময় ওই পুকুরের জলে স্নান করিয়েই ছাগলকে নিয়ে আসা হত বলির জন্য।
তন্ত্রসাধনার এই পীঠস্থান কিন্তু আজও ভক্তদের কাছে সমানভাবেই আকুতি জানানোর স্থল বা জায়গা হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, যাঁর কেউ নেই, তাঁর আছেন দেবী সিদ্ধেশ্বরী। বিপদে-আপদে তিনিই ভরসা। তিনিই মেটান ভক্তদের আবদার বা কামনা। আর, এই বিশ্বাস থেকেই প্রতিবছর কৌশিকী অমাবস্যা, দীপান্বিতা অমাবস্যা ও ফলহারিণী অমাবস্যার রাতে এখানে বিপুল সংখ্যায় ভিড় করেন ভক্তরা। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন দেবী সিদ্ধেশ্বরীর দর্শন করতে। তাঁর কাছে মনস্কামনা জানাতে। দেবীর আশীর্বাদ নিতে।