বাংলায় জাগ্রত মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম না। কালীঘাটের কালীমন্দির থেকে তারাপীঠের মন্দির- এরাজ্যে রয়েছে একের পর এক জাগ্রত তীর্থস্থান। তারই মধ্যে উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে হাওড়ার শিবপুরের ওলাবিবিতলার, 'হাজার হাত কালী মন্দির'। শতবর্ষ প্রাচীন এই মন্দিরের ভক্ত ছড়িয়ে আছে উত্তর থেকে দক্ষিণ- গোটা ভারতেই। যেমন, শ্রাবণ মাসে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে দক্ষিণ ভারতের বহু ভক্ত এই মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য ভিড় করেন।
কথিত আছে, ১৮৮০ সালে এই মন্দিরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল। কলকাতার চোরবাগানের তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ওরফে আশুতোষ তর্করত্ন এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। তিনি স্বপ্নে এমন হাজার হাত কালীকে দেখেছিলেন। যেখানে বর্তমানে মন্দির, সেই জায়গাও স্বপ্নে দেবীই দেখিয়েছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে। সেইমতো জায়গা দেখে জমি কিনে নেন আশুতোষ। হালদারদের থেকে ১২৫ টাকায় তিন কাঠা জমি তিনি কেনেন।
কুমোরটুলির শিল্পী প্রিয়নাথ পাল চণ্ডীপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী তৈরি করে দেন দেবীর হাজার হাত। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন প্রতিষ্ঠা হয় এই মন্দির। দেবী নীলবর্ণা, সিংহের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। এখানে প্রতিদিন সকাল ৬টা ৩০, দুপুর ২টো এবং রাত ৮টা ৩০-এ পুজো হয়। দেবীর নৈবেদ্যতে থাকে মাছ, ভাত, ফল-মিষ্টি। রাতের আরতির পর হয় প্রসাদ বিতরণ।
আরও পড়ুন- সারস্বত বাংলা, শতবর্ষের দোড়গোড়ায় বিদ্যাদেবীর মন্দির, যেখানে বছরভর চলে পুজোপাঠ
কথিত আছে, এখানকার এক দক্ষিণ ভারতীয় ভক্ত কৃষ্ণা সুব্রহ্মণ্যম প্রায় ৬০ বছর আগে দেবীর কৃপায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তারপর থেকে তিনি দক্ষিণ ভারতে দেবীর প্রচার চালানো শুরু করেছেন। যার জেরে এখন এই মন্দিরের প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় ভক্ত। তাঁরা শ্রাবণ মাসে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে দক্ষিণ ভারত থেকে এই মন্দিরে এসে দেবীর পুজো দিয়ে থাকেন। এখানে দেবীর অস্ত্র ও মুকুট তৈরি হয়েছে ১২ কেজি রুপো দিয়ে। এছাড়াও রুপো দিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীর মাথার ছাতা।
'হাজার হাত কালী মন্দির'-এর বৈশিষ্ট্য, এখানে কালীপুজো হলেও কোনও বলিপ্রথা নেই। প্রতিষ্ঠাতা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যরাই সামলান মন্দিরের সেবায়েতের কাজকর্ম। প্রতিষ্ঠাদিবস বুদ্ধপূর্ণিমা ও শ্যামাপুজোর তারিখে বেশ জাঁকজমক করে হয় দেবীর আরাধনা।