দেব-দেবীর অলৌকিকত্ব নিয়ে কাহিনি নেহাত কম নেই। কিন্তু, সেসব শুধুই এর-তাঁর মুখ থেকে শোনা কথা। এককথায় গল্প বা কাহিনি। কিন্তু, হুগলির তালান্ডু গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এসব কাহিনি কোনও শোনা কথা নয়। এখানকার এক মন্দিরের দেবী বিশালাক্ষী। তিনি যেন গ্রামেরই কোনও বাসিন্দা। ঠিকই এমনই ভঙ্গীতে দেবী নাকি যখন-তখন চলে যান গ্রামেরই কোনও না-কোনও বাড়িতে। এমনটাই দাবি গ্রামের বাসিন্দাদের।
গ্রামে দেবী বিশালাক্ষীর যে প্রতিমা রয়েছে, তা কাঠের। আর, সেই প্রতিমা আজকের নয়, বহু পুরোনো বলেই জনিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বহু পুরোনো হওয়ায় কালের নিয়মে ওই প্রতিমা ক্ষয়ে যাচ্ছিল। এরপর ১৩৮৬ বঙ্গাব্দের ২৩ বৈশাখ সাধক সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ নবরূপে এই গ্রামে বিগ্রহ-সহ বিশালাক্ষীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরে দেবীর পুজোর সুবন্দোবস্ত করেন।
পরবর্তীকালে ওঙ্কারনাথ দেবের সন্ন্যাসী শিষ্য ত্রিদণ্ডীস্বামী পরাঙ্কুশ মহারাজ এখানে দুর্গাষষ্ঠীর দিনে দেবীকে কাপড় পরাতে এসে ভাবস্থ হয়ে সমাধিস্থ হন। তারপর তিনি কিছু বিশেষ ভক্ত-শিষ্যকে দেবীর হৃদস্পন্দন অনুভব করান বিগ্রহের হৃদয় স্পর্শ করিয়ে।
আজও আপামর গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কাছে দেবী বিশালাক্ষী জীবন্ত। তবে তাঁরা দেবীর বড় বড় চোখ এবং দাঁত বের করা রূপ দেখে ভয় পান। সন্ধের পর এই গ্রামে কেউ একা বের হন না। অতি জাগ্রত দেবী বিশালাক্ষী আজও গ্রামবাসীদের দেখা দেন। তবে, ভয় দেখান না। বরং, মায়ের মত সকলের অভিভাবকের মত গ্রামবাসীদের খোঁজখবর নেন।
মাসতিনেক আগেই, এক কৃষক ভ্যানচালক সকালে বাজারে যাচ্ছিলেন। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। দরজা খোলামাত্রই দেখেন, সাদা-লালপেড়ে কাপড় পরে দেবী স্বয়ং দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন হাসিমুখে। শুধু তাই নয়, দেবী ওই কৃষককে জিজ্ঞাসা করেন, কীরে বাজার যাচ্ছিস? এরপরই অদৃশ্য হয়ে যান দেবী। এসব দেখে ওই কৃষক মন্দিরে এসে দেবীকে পুজো দিয়ে যান।
আরও পড়ুন- অলৌকিক শক্তিপীঠ দ্বারবাসিনী, যেখানে গেলে মনস্কামনা পূরণ নিশ্চিত, এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের
এরকম নানা ঘটনা ঘটে চলেছে এই গ্রামে। দ্বিভুজা, এলোকেশী, খড়গ আর রুধির পাত্রহাতে মহাকাল ভৈরব এবং অসুরের ছিন্ন মুণ্ডের ওপর দণ্ডায়মান দেবী। দেবীর মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে শিবমন্দির। যা বিশালাক্ষী মন্দিরের চেয়েও প্রাচীন। এছাড়া এখানে দেবী ষষ্ঠীর মন্দিরও রয়েছে। দেবীকে ভোগ হিসেবে ফলমূল, নৈবেদ্য, মিষ্টি নিবেদন করা হয়.