ফাল্গুন পূর্ণিমায় হওয়া দোলের আনন্দ এখনও মেটেনি। তার মধ্যেই এসে গেল পঞ্চম দোল। প্রতিবছর দোলযাত্রার পর পঞ্চমীতে আয়োজিত হয় পঞ্চম দোল। শাস্ত্রমতে দোলের মতই পঞ্চম দোলেরও এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই পঞ্চম কথাটির মধ্যে অনেক তত্ত্ব লুকিয়ে রয়েছে। তা হল- ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষকে ছাপিয়ে পঞ্চম পুরুষার্থ প্রেমকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব। কারণ, এই প্রেম শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যের আস্বাদন করায়।
যাকে বলা হয়েছে, 'ভক্ত ভেদে রতি ভেদ পঞ্চ পরকার। শাস্ত্র রতি দাস্য রতি সখ্য রতি আর।। বাৎসল্য রতি মধুর রতি এ পঞ্চ বিভেদ। রতিভেদে কৃষ্ণভক্তি রস পঞ্চভেদ।। শান্ত দাস্য সখ্য বাৎসল্য মধুর রস নাম। কৃষ্ণ ভক্তি রসমধ্যে এ পঞ্চ প্রধান।।' যার অর্থ হল শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর রস। প্রেমভক্তির এই পঞ্চরসেই পাঁচটি গুণ পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় গোদাবরী তীরে পার্ষদ রায় রামানন্দের সঙ্গে কথোপকথনে এমনই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু।
সেইমতো পঞ্চম দোল পালন গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের অন্যতম রীতি। গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের অনেকেই মনে করেন, রাধাকৃষ্ণের দোলের দিন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের দোল হওয়া উচিত নয়। তাই মহাপ্রভুর জন্য পালন করা হয় পঞ্চম দোল। কথিত আছে, পঞ্চম দোলের সময় শ্রীকৃষ্ণ সখা ও সখীদের সঙ্গে দোলায় চেপে আনন্দ করতেন। তাই অনেক জায়গায় পঞ্চম দোলে পালকিতে চাপিয়ে দেব মূর্তিকে ঘোরানো হয়।
আরও পড়ুন- চুঁচুড়ার জাগ্রত সত্যময়ী কালী, যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সাধক বামাক্ষ্যাপার হাত দিয়ে
বিভিন্ন জায়গায় সকালে রাধা-মদনমোহন জিউ এবং সেবিত গোপাল, নিতাই, গৌর-সহ সব মূর্তি আনা হয় পঞ্চম দোল মন্দিরে। সেখানে ভোগ-আরতির মাধ্যমে ভোগ নিবেদন করা হয়। এরপর চৈতন্যদেবের পায়ে আবির দিয়ে পঞ্চম দোলের শুভ সূচনা করা হয়। ভক্তরা এক এক করে এসে চৈতন্যদেবের পায়ে আবির দেন ও আশীর্বাদ লাভ নেন। এদিন শ্রীধাম নবদ্বীপেই যেমন শ্রীবাস অঙ্গনে পঞ্চম দোল উৎসব উপলক্ষে মহোৎসবের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও রাজ্যে অন্যত্রও সমারোহের সঙ্গে পালিত হয় পঞ্চম দোল।