শহর কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর অন্যতম বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট বা বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট। এই রাস্তার ধারেই বউবাজারে রয়েছে শহর কলকাতার অন্যতম প্রাচীন কালীমন্দির। এমনিতে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দির হলেও, এই মন্দিরের বেশি পরিচিতি ফিরিঙ্গি কালী মন্দির নামে। চাঁদনি স্থাপত্যের এই মন্দিরের কালীমূর্তিটি মাটির তৈরি। উচ্চতায় সাড়ে পাঁচ ফুট। দেবী বসন পরিহিতা এবং ত্রিনয়না। নিত্য পুজো তো হয়ই। এছাড়া এই মন্দিরে প্রতি অমাবস্যায় কালীপুজোর চল আছে। আর প্রতি পূর্ণিমায় হয় সত্যনারায়ণ পুজো। কালীমূ্র্তি ছাড়াও এই মন্দিরে রয়েছে শীতলা, মনসা, দুর্গা, শিব ও নারায়ণের মূর্তি।
মন্দিরের দেওয়ালের সামনের ফলকে লেখা আছে, 'ওঁ শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরাণী। স্থাপিত ৯০৫ সাল, ফিরিঙ্গী কালী মন্দির।' এই ৯০৫ সাল বলতে ৯০৫ বঙ্গাব্দের কথা বোঝানো হয়েছে। কথিত আছে, এই মন্দিরটি প্রথমে ছিল শিব মন্দির। ১৮২০ থেকে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, টানা ৬০ বছর এই মন্দিরের এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন শ্রীমন্ত পণ্ডিত। সেই সময় মন্দিরের বিশেষ নামডাক ছিল। নিঃসন্তান শ্রীমন্ত পণ্ডিত ১৮৮০ সালে পোলবার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে মন্দিরটি বিক্রি করেন। সেই সময় ৬০ টাকায় এই দেবোত্তর সম্পত্তিটি কিনেছিলেন শশিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- দেবীর দুয়ারে এলেই মনস্কামনা পূর্তি, এতই জাগ্রত মানসিংহ প্রতিষ্ঠিত আমডাঙা কালী
এই মন্দির ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে ওঠার পিছনে বিশেষ কারণ আছে। কথিত আছে, এই মন্দিরে একটা সময় আসা-যাওয়া করতেন পর্তুগিজ অ্যান্টনি কবিয়াল। সেই সময় মন্দির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বিধবা প্রমীলাদেবী। অ্যান্টনি কবিয়ালের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই কাহিনির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছিল জনপ্রিয় সিনেমা অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। তবে, এই মন্দির জাগ্রত বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। সন্ধ্যা আরতি বা পুজোপাঠের সময় মন্দিরের সামনে বেশ ভিড় হয়। আশপাশের বাসিন্দারা তো বটেই, পথচারী থেকে কর্মস্থল ফেরত যাত্রীরাও যোগ দেন এই মন্দিরের পুজোপাঠে।