শিয়াখালার জাগ্রত দেবী উত্তরবাহিনী বিশালাক্ষী, মনস্কামনা পূরণের পাশাপাশি শিক্ষায় দেন সিদ্ধি

প্রায় ৫০০ বছর ধরে এখানে চলছে দেবীর আরাধনা।

DEVI UTTARBAHAINI

হুগলি জেলায় শিয়াখালায় গত ৫০০ বছর ধরে পূজিতা হচ্ছেন দেবী উত্তরবাহিনী বিশালাক্ষী। এই শিয়াখালার আগের নাম ছিল শিবাক্ষেত্র। এখানেই রয়েছে মন্দিরটি। বিগ্রহের উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। আগে ছিল মাটির মূর্তি। কিন্তু, তাতে ইঁদুর গর্ত করে। তারপরই স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সহায়তায় বিগ্রহ আনা হয় কাশী থেকে। ১৬ আষাঢ় দেবীর প্রতিষ্ঠা দিবস। পাশাপাশি, বিজয়া দশমীর পরের দিন অর্থাৎ একাদশীতে দেবীর ঘট বিসর্জন ও প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ঘট প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় শাণ্ডিল্য বংশের ব্রাহ্মণ। ভক্তদের বিশ্বাস, দ্বিভুজা দেবী উত্তরবাহিনী বিশালাক্ষী অত্যন্ত জাগ্রত। তিনি ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।

কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে রয়েছে বন্দরগ্রাম শিয়াখালার কথা। আজ যেখানে মন্দির, একটা সময় সেই জায়গা দিয়েই বয়ে যেত কৌশিকী নদী। সেই নদী থেকেই উদ্ধার হয়েছিল দেবীর বিগ্রহ। আজ অবশ্য নদী নেই। এখানে ছোট-বড় পুকুর ও দিঘি হয়ে অতীতের সাক্ষ্য দিচ্ছে কৌশিকী। কথিত আছে মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান পুরন্দর খাঁ এই অঞ্চলে কনৌজ থেকে ১০০টি ব্রাহ্মণ পরিবারকে নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষাকেন্দ্র তৈরির জন্য। তার ভিত্তিতে তৎকালীন শিবাক্ষেত্রে গড়ে উঠেছিল টোল সংস্কৃতি।

এমনই এক ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান শাণ্ডিল্য বংশের রাজেন্দ্রনাথের লেখাপড়ায় মন না-থাকায় তাঁর বাবা তাঁর মাকে ছেলের খাবারের পাতে ভাতের জায়গায় ছাই তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা দেখে মনমরা রাজেন্দ্রনাথ কৌশিকী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। কথিত আছে, সেই সময় তিনি দেবী উত্তরবাহিনী বিশালাক্ষীর দৈববাণী শুনতে পান।

আরও পড়ুন- ঐতিহ্যশালী মন্দির, স্বপ্নাদেশ দিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন গড়িয়ার মহামায়াতলার দেবী মহামায়া

দেবী তাঁকে নদীগর্ভ থেকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। সেইমতো রাজেন্দ্রনাথ নদীগর্ভ থেকে সওয়া ইঞ্চির দেবীমূর্তি উদ্ধার করেন। এরপরই নাকি রাজেন্দ্রনাথের মধ্যে এক অলৌকিক ক্ষমতা দেখা দেয়। তিনি তৎক্ষণাৎ পাণ্ডিত্য লাভ করেন। তাঁর বাবা সেই সময় নিজের টোলে পড়াচ্ছিলেন। রাজেন্দ্রনাথ সেই টোলে গিয়ে নাকি অতি দুরুহ শ্লোকের সমাধান করে দেন।

জনশ্রুতি আছে, একবার এক জমির বজরা নিয়ে কৌশিকী নদী দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বজরা থেকে গান-বাজনার শব্দ ভেসে আসছিল। তা শুনে দেবী চাষির মেয়ের রূপ ধরে নদীর পাড়ে গিয়ে বজরা থামানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু, জমিদার সেই অনুরোধে কর্ণপাত না-করায় ক্ষুব্ধ হন দেবী। আর, তিনি উত্তরমুখী হয়ে যান। সেই থেকে এই মন্দিরে উত্তরমুখী দেবীরই আরাধনা চলে।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Five hundred years old shiakhala devi uttar bahini temple

Next Story
ঐতিহ্যশালী মন্দির, স্বপ্নাদেশ দিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন গড়িয়ার মহামায়াতলার দেবী মহামায়া
Exit mobile version