/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/food-vlog.jpg)
কী বলছেন ফুড ব্লগাররা?
বাঙালির কাছে উৎসব মানেই তাতে খাওয়াদাওয়া থাকবেই। কিন্তু শুধুই কি উৎসব? আপামর বাঙালি যে কি মাত্রায় পেটুক তাঁর উদাহরণ মিলবে নানান ক্ষেত্রে। রসে বসে, মাছে ভাতে বাঙালি। মিষ্টি থেকে কোপ্তা কালিয়া, কোনোটাই তাঁদের অপছন্দের তালিকায় নেই। স্ট্রিট ফুড হোক কিংবা বড় রেস্তোরাঁ - ভোজনরসিক বাঙালির না লাগে উৎসব না লাগে কোনও পার্বণ। তাঁরা ভিন্ন স্বাদ চেখে দেখতে সবসময় প্রস্তুত।
তবে, এখন ফুড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যারা ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে তাঁরা হলেন ফুড ব্লগার অথবা ফুড ভ্লগার। এঁরা প্রধানত নিজের সৃজনশীলতার মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট একটি রেস্তোরাঁ অথবা ফুড ফেস্টিভ্যাল এসব জায়গায় খাওয়াদাওয়ার মান, আম্বিয়েন্স, তথাকথিত প্রেজেন্টেশন এবং সেই স্থানের সুবিধা অসুবিধা গুলি তুলে ধরেন। বিশেষ করে বলা যায়, অতীতে যেমন ফিল্ম রিভিউ পড়ে মানুষ সিনেমা দেখতে যেতেন এখন ব্লগারদের রিভিউ পড়ে খাবার খেতে যান। পছন্দের ব্লগারদের ভাল রিভিউ মানেই তাঁদের দর্শকদের কাছে গ্রিন টিকিট। তবে, অভিযোগ উঠছে অনেক। রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে নাকি ধ্বংস করছেন ফুড ব্লগাররা! তাঁদের রিভিউর কারণেই মানুষের নির্দিষ্ট ধারণা হয়ে যাচ্ছে একটি জায়গা সম্পর্কে?
ফুড ব্লগারদের একটি রিভিউই সমস্ত নষ্টের গোড়া? কিন্তু এর নেপথ্যের গল্পটা কী? উত্তর দিচ্ছেন শহর কলকাতার তিন বিখ্যাত ফুড ব্লগার, ফুডি বাঙালি অর্থাৎ কমলিকা দে, রোহেল জয়েসওয়াল এবং Tasty Food canvas এর সায়ক ও মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়। ফুড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। খাবার চেখে দেখা থেকে সেখানকার পরিবেশ সবকিছুই নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন এঁরা। তাঁদের এই প্রসঙ্গে কী মতামত?
শুধু রেস্তোরাঁ নয়, বরং ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে ফুড ফেস্টিভ্যাল ফুডি বাঙালি এখন বেশ জনপ্রিয় মুখ। তাঁর কথায়, "একটা জায়গা সম্পর্কে যখন খারাপ কিছু রটে তাঁর অর্থ সেখানে নিশ্চই নেগেটিভ কিছু ঘটেছে। এটা শুধু ফুড ব্লগারদের সূত্রে নয়, সাধারণ মানুষদের থেকেও রটে। অনেকেই আছে যারা পেইড প্রমোশন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও আমি বলব যে রিভিউ সবসময় যথাযথ হওয়া উচিত। অনেকেই আছে যারা হয়তো শুধু পয়সার জন্য বা ভিউজ আসবে বলে ফুড ব্লগিং করে তাঁদের ক্ষেত্রে হয়তো কিছুই যায় আসে না। কিন্তু একটি জায়গার সত্যতা সবসময় জানানো উচিত। এটা আমাদের একটা দায়িত্ব। শুধু খেলেই তো হল না। আমাদের রিভিউ দেখে আরও পাঁচটা লোক যাবে, তারপর গিয়ে দেখবে আমরা যা বলেছি তাঁর কিছুই নেই...এটা একটা অভিযোগের জায়গায় চলে যায়। তবে, ব্যক্তিগত ভাবে আমার যদি কোনও জায়গার কিছু খারাপ লাগে, আমি তাদের সাজেশন দি যে এভাবে করো, এটা ঠিক করো। কিন্তু শুধু পয়সার খাতিরে ভাল রিভিউ আমার আসে না"।
খাবার পরিবেশনের সঙ্গে তাঁর স্বাদ হওয়াও দরকার। কিংবা সেই নির্দিষ্ট রেস্তোরাঁর সকলের ব্যবহারের দিকেও নজর রাখেন ফুড ব্লগাররা। কোথাও পেইড প্রমোশন করতে গেলে কি বাঞ্ছনীয় ভাল রিভিউ দেওয়া? এই প্রসঙ্গে রোহেল জয়েসওয়াল বললেন, "যেকোনও কিছুর দুটো দিক থাকে। নির্দিষ্ট কুইসীন বলো অথবা পরিবেশ সবকিছুই আমাদের দেখতে হয়। আমি মনে করি ফেক রিভিউ দেওয়াটা খুব খারাপ। এখন পুজোর সময় বলো অথবা, কোনও ফেস্টিভ্যাল যখন লোক বেশি তখন কোয়ালিটি একটু উনিশ বিশ হতেই পারে। কিন্তু ব্লগারদের উচিত অনেস্ট মতামত দেওয়া। আমি বলছি একটা, কিন্তু হচ্ছে একটা এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। কিছু রেস্তোরাঁ পারলে পয়সা দিয়ে ব্লগারদের কিনে নেয়। আমার কাছে সত্যিটা বলা খুব দরকার। সেটার সঙ্গে টাকার প্রশ্ন নেই। টাকা দিচ্ছে বলেই খারাপকে ভাল বলতে হবে এটা তো হতে পারে না। আমার রিভিউ দেখে যদি কেউ কোনও রেস্তোরাঁতে যায়, এবং খারাপ অভিজ্ঞতা হয় তাঁরা অনেকেই আমার পোস্টে কমেন্ট করেন। আমি তখন সোজাসুজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি"।
মানুষ ভাল রেস্তোরাঁয় খেতে যায় মুহূর্ত উদযাপনের জন্য। তাঁদের লক্ষ্য একটাই, ভাল কিছু ডিশ চেখে দেখা। কিন্তু আসলেই ফুড ব্লগাররা দায়ী এই কারণে? Tasty food canvas এর সায়ক চট্টোপাধ্যায় বললেন, "এই যে ব্লগার, রেস্টুরেন্ট এবং অডিয়েন্স - গোটা ব্যবস্থাটা একদম ঠিক নেই। এটাকে ইকো ফ্রেন্ডলি করা উচিত আগে। সাধারণ মানুষকে আগে বোঝাতে হবে যে আমরা টাকা পেলেই ভাল রিভিউ দি না। অনেকেই আছে আমায় প্রশ্ন করেন যে তোমায় এই রেস্টুরেন্ট থেকে টাকা দিয়েছে? আমি হ্যাঁ বলতেই তাঁদের মধ্যে একটা ভাবনা চলে আসে যে ও তাহলে তো ভাল বলবেই। এই যে বিষয়টা এটা সত্যি নয়। আমি যখন কোথাও যাই, তাঁদেরকে এটাই বলে দি যে টাকা দিচ্ছেন আমার ক্রিয়েটিভিটিকে, আমি যে কষ্ট করে যাচ্ছি, শুট করছি সেইজন্য। খাবারের কোয়ালিটি নিয়ে আমি সবসময় সত্যি কথাই বলব। বিশেষ করে ফ্রি তে খাবার খেতে গিয়ে অনেকেই নাম ডুবিয়ে দিয়েছে। আদৌ সেই মানুষটা এই ব্যবসাটা সৎভাবে চালাচ্ছে কিনা সেটা জানা দরকার। নিজের ভিউজ বাড়বে বলে খারাপটাকে ভাল বলব? তারপর যে বিশ্বাসটা ভঙ্গ হবে"?
তাঁদের সকলের কথায় এটুকু প্রমাণিত, যে রেস্তোরাঁ ব্যবসা লাটে ওঠানোর ইচ্ছে কারওর নেই। তবে, ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিব্রত করার দরকার বলেও তারা মনে করছেন না।