তাঁর মোবাইলে ফোন করলেই বেজে ওঠে বাউলের সুর। ছিলেন ফুটবলার, হয়ে গেলেন বাউল শিল্পী। ধাঁধার মতো ঠেকছে তো? পরিমল সরকার, পেশায় বেসরকারি সংস্থার চাকুরে। ছোটবেলা থেকেই গোলকিপিংয়ের শখ ছিল, অনুপ্রেরণা ছিলেন ফুটবলার তরুণ বসু। শুধুমাত্র উৎসাহ আর ভাললাগা থেকে তাঁর ফুটবল খেলার সূচনা। দ্বিতীয় ডিভিশন পর্যন্ত ফুটবল খেলেন পরিমল বাবু। কখনও পুলিশের তো কখনও সিটিসির টিমের ডামি হয়ে খেলেছেন। 'কলেজ গেমস অফ স্পোটর্স' ক্লাব থেকে শেষ ফুটবল খেলেন তিনি। এরপরই দুপায়ের কার্টিলেজ ছিঁড়ে যায়, সময়টা ১৯৭৬ কিংবা '৭৮, টালিগঞ্জের রিজেন্ট পার্কের ছেলেটার প্রথম ডিভিশনে খেলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। মাঠে ফেরার আপ্রাণ লড়াই করেছিলেন, কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি ক্লাব।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সাতক্ষীরাতে গান গেয়েছেন উদাস বাউল।
কিন্তু ভাবছেন টালিগঞ্জের অগ্রগামী ক্লাবের ছেলেটা উদাস খ্যাপা কী করে হলো? তিন বছর পর ফিরে এলেও খেলা চালাতে পারেননি। বাবার দেওয়া একতারা মনখারাপের সঙ্গী হয়ে যায়। তথ্যকেন্দ্রের চাকুরিরত বন্ধুর লোকগানের সঙ্গে সঙ্গত দিতেন তিনি। কিন্তু কোনদিনই মনে ধরেনি ছোটবেলার বন্ধু বাসুদেব পালের গান। এই নিয়ে ঝগড়াও হয় দুজনের। জেদ ছিল, গান গেয়ে প্রমাণ করবেন তিনিই ঠিক। একবার শ্রোতা হিসাবে অশোকনগরের বাণীপুরের মেলায় গিয়ে হঠাৎই মিলে যায় লোকগান গাওয়ার সুযোগ, সেই শুরু। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কেন্দুলি বা জয়দেবের মেলাতে ভবা পাগলার আখড়াতে বাউল বরুণ দাসের সান্নিধ্যে এসে যাত্রা শুরু লোকগান থেকে বাউল গানের পথে। রীতি মেনে লালনগীতি, লোকগানের শিক্ষা গুরু অভিজিৎ বসুর কাছে।
আজ তিনি পুরোদস্তুর বাউল। পশ্চিমবঙ্গ তথ্যকেন্দ্রের বারাসাত জোনের শিল্পী তিনি। নিয়ম অনুযায়ী মাসে চার দিন অনুষ্ঠান করেন, সরকারের মাসিক ভাতাতেই চলে যায় তাঁর। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাতক্ষীরাতেও গান গেয়েছেন উদাস বাউল। তবে বাউল হলে কী হবে, ফিফার ডেডিকেটেড ফ্যান তিনি। ব্রাজিলের সার্পোটারও। আজও ভাল লাগে মেসি, সুয়ারেজ রোনাল্ডোদের। তাঁদের খেলার খবর পেলেই দেখতে বসে যান।