বর্ষার জঙ্গলের রূপ কেমন? সাধারণ পর্যটকরা সে কথা জানেন না বললেই চলে। কারণ প্রতি বছর মাঝ জুন থেকে মাঝ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বনবাংলোগুলির বুকিং বন্ধ থাকত এতদিন। এবছর থেকে সে নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টিতে গাছের পাতায় পাতায় টিপ টিপ শব্দ আর জঙ্গলে সবুজের সমারোহ উপভোগ করার সুযোগ এসেছে আমজনতার সামনে। কিন্তু সুযোগের তেমন সদ্ব্যবহার হচ্ছে কই? প্রথম ১০ দিনে মাত্র ১০ শতাংশ পর্যটক টানতে পেরেছে বর্ষার জঙ্গল।
বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন, “বন্য়প্রাণীদের প্রজননের জন্য বর্ষায় জঙ্গল যেমন বন্ধ থাকে তেমনই থাকবে। তবে কিছু জঙ্গল এলাকায় অতিথিশালা বা কটেজ খোলা থাকছে পর্যটকদের জন্য়। চাপড়ামারি ওয়াচ টাওয়ার, ধূপঝোরা ইকো ট্য়ুরিজম রিসর্ট, কালীপুর জঙ্গল ক্য়াম্প, জয়ন্তী, সিকিয়াঝোরা ইকো ট্য়ুরিজম সেন্টার, রাজাভাতখাওয়া, জলদাপাড়ার মেন্দাবাড়িসহ বেশ কিছু বনাঞ্চলে বর্ষার জঙ্গল প্রত্য়ক্ষ করতে পারবেন পর্যটকরা। হর্নবিল ক্য়াম্প,মূর্তিতেও খোলা থাকছে বেশ কিছু কটেজ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে গভীর জঙ্গলে ঢোকা নিষিদ্ধ।’’
রাজ্য় বন দফতরের সেই বিজ্ঞপ্তি।বনমন্ত্রী মনে করছেন, এর ফলে "পর্যটকরা একদিকে বর্ষার আনন্দ উপভোগ করবেন। পাশাপাশি পর্যটনে জড়িত ব্য়বসায়ীদেরও লক্ষ্মীলাভ হবে। এই অফ সিজনে কিছুটা হলেও সুরাহা হবে পর্যটন ব্য়বসায়ীদের।’’
নতুন করে জঙ্গল লাগোয়া বেশ কিছু কটেজ খোলা হলেও পর্যটক টানতে তেমন সাফল্য আসেনি। এই বর্ষার মরসুমে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে বলে জানালেন উত্তরবঙ্গ পর্যটনের ট্য়ুর অপারেটর কমল মহুরী। তিনি বলেন, "বনাঞ্চল সংলগ্ন কিছু কটেজ বরাবর খোলা থাকে। তবে চাপড়ামারি ওয়াচ টাওয়ার নতুন করে খোলা আছে। আশা করেছিলাম ব্য়বসা বাড়বে, কিন্তু আশানুরূপ কিছু হয়নি।’’ তাঁর মতে প্রচারের অভাব এর জন্য কিছুটা দায়ী। এছাড়া বৃষ্টি আগে এসে পড়াতেও সমস্যা হয়েছে। তাঁর কথায়, "একেবারে যে ব্য়বসা হয়নি তা নয়। তবে আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল।’’
বন্যপ্রাণীদের প্রজনন সময় নিয়ে সরকারি মত উড়িয়ে দিচ্ছেন গবেষক তন্ময় ঘোষ। তাঁর স্পষ্ট দাবি, "বর্ষার আগেই ৯০ শতাংশ বন্য়প্রাণীদের প্রজনন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। গন্ডার ও হরিণদের নির্দিষ্ট প্রজনন সময় নেই। সারা বছর ধরেই চলে এদের প্রজনন প্রক্রিয়া।’’ তাঁর মতে, "বর্ষায় জঙ্গলের নদীগুলি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। জঙ্গলের রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যায়। গাড়ি ফেঁসে যাওয়ার ভয় থাকে। পর্যটকরা বিপদে পড়তে পারেন, এটা একটা যুক্তি হতে পারে। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের প্রজনন বর্ষায় জঙ্গলে পর্যটক আগমনের কারণ হতে পারে না।
তন্ময়ের কথায়, "যেখানে পর্যটকের যাতায়াত বেশি সেখানে বন্য়প্রাণীর সংখ্য়াও বেশি। সে বাঘ বা গণ্ডার যাই হোক। জনসমাগম বেশি হলে বরং চোরাশিকারীর উৎপাত কম হয়। সারা বছর পর্যটকরা গেলেও বাঘসহ নানা বন্য়প্রাণীর সংখ্য়া বেড়েছে এমন বনের সংখ্য়াও কম নেই।’’