Advertisment

‘ফরচুন’ তেলের বিজ্ঞাপন বিতর্কে মুখ খুললেন ভোজনরসিক বঙ্গসন্তানরা

নবমীতে কব্জি ডুবিয়ে কচি পাঁঠার মাংস কিংবা ইলিশ-চিংড়ির নানা পদ...‘ফরচুন কাচ্চি ঘানি’ সরষের তেলের বিজ্ঞাপনে জিভে জল আনা বাঙালির এইসব আমিষ পদকে নিয়েই আপত্তি উঠেছে। যার জেরে শেষমেশ সেই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি সরিয়েই ফেলেছে সংস্থাটি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
fortune ad, ফরচুন বিজ্ঞাপন

ফরচুন কাচ্চি ঘানি সরষের তেলের সেই বিতর্কিত বিজ্ঞাপন। ছবি: ফেসবুক

ঢাকের বাদ্যি, নতুন জামা, চারদিকে আলোর রোশনাই...আর রেস্তোরাঁর সামনে অপেক্ষা। কখন টেবিল পাব? হ্যাঁ, দুর্গাপুজোর অনেক মানের মধ্যে সেই কোন আদ্যিকাল থেকে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে ‘পেটপুজো’। বিশেষত বাঙালির কাছে, পুজো মানেই পেটপুজো। আর পেটপুজোতে বাঙালির পাত মানেই কষা মাংস, কিংবা চিংড়ির মালাইকারি অথবা পাতুরি বা সরষে ইলিশ। বাঙালির সেইসব লোভনীয় রসনাতৃপ্তি ঘিরেই এবার বাঁধলো বিতর্ক। ‘ফরচুন কাচ্চি ঘানি’ সরষের তেলের বিজ্ঞাপনে জিভে জল আনা বাঙালির সেইসব আমিষ পদকে নিয়েই আপত্তি উঠেছে। যার জেরে শেষমেশ সেই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি সরিয়েই ফেলেছে ওই সংস্থা।

Advertisment

পুজোয় কেন আমিষ খাবারের বিজ্ঞাপন? যেখানে উত্তর ভারতে নবরাত্রির মতো ধর্মীয় রীতি রয়েছে, সেখানে আমিষ খাবারকে সামনে রেখে কেন এই বিজ্ঞাপন, তা নিয়েই আপত্তি তুলেছে হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি ও সনাতন সংস্থা। প্রসঙ্গত, গৌরী লঙ্কেশ, নরেন্দ্র দাভোলকর ও এমএম কালবুর্গীর হত্যার সঙ্গে ওই সংস্থা দুটির নাম জড়িত বলে জানা গিয়েছে। ফরচুনের এহেন বিজ্ঞাপনে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে বলে তোপ দেগেছেন ওই সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু বাঙালির পাতে এমন নিষেধাজ্ঞা তোলা নিয়ে কী বলছেন বাঙালি ব্যক্তিত্বরা?

আরও পড়ুন: ‘থিম সংগের’ দাপটে কি চাপা পড়ে যাচ্ছে ঢাকের আওয়াজ?

বাঙালির লোভনীয় পদ নিয়ে বিতর্কে কথা বলতে গিয়ে মুখ খুললেন ভোজনরসিক অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, "কথায় আছে, আপ রুচি খানা, পর রুচি পহেননা, অর্থাৎ নিজের রুচিতে খাব। একটা প্রোডাক্ট কীভাবে বিক্রি হবে বা কী জিনিসের সঙ্গে দেখালে তা ভাল হবে, তার সঙ্গে কোনও ধর্ম বা আমিষ-নিরামিষের কোনও ব্যাপার নেই। যদি দেখা যায়, মাছের সঙ্গে দেখালে বিক্রি ভাল হয়, তবে সেটা দেখাব, আর যদি করলার সঙ্গে দেখালে ভাল হয়, তবে সেটা দিয়ে দেখাব। এটা তো ব্যবসার ব্যাপার।" আমিষ খাবার দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ওই অভিনেতা আরও বললেন, "পুজোর সঙ্গে এর কোনও সম্পর্কই নেই। এমনটা হওয়া উচিৎ নয়।"

খরাজের সুরেই সুর মেলালেন টলিপাড়ার অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। এ প্রসঙ্গে অপরাজিতা বললেন, "এটা বাড়াবাড়ি। পুজো মানে নিরামিষ ঠিক আছে। অষ্টমী পর্যন্ত অনেকেই আমিষ খান না। তা বলে কি বাকিরা খাবেন না? খাওয়াটা যার যার রুচির উপর নির্ভর করে। আমার ক্ষেত্রে যেমন, আমার নবরাত্রি থাকে বলে অষ্টমী পর্যন্ত আমি খাই না আমিষ। আমার দীক্ষা আছে, নিয়মে বাধা, তাই খাই না। তাই বলে কি আমার বর খাবে না? আমার বাচ্চা খাবে না? অদ্ভুত! পুজো মানে তো বাড়িতে থেকে বাড়ির লোকজন ভাল ভাল রান্না করে খাবেন। পুজোটা তো শোকপালনের জন্য নয়! মানুষের কোনও কাজ নেই। আসল কাজে মাথা নেই, এসবে আছে। পাগল লোকজন সব!"

তাঁর নিজের বাড়িতেও দুর্গাপুজো হয়। শুধু তাই নয়, যে পুজোতে মা দুগ্গাকে আমিষ ভোগও দেওয়া হয়। এ বিতর্ক সম্পর্কে জানতেই একটি চ্যানেলের একসময়ের বিখ্যাত রান্নার শোয়ের সঞ্চালক সুদীপা চট্টোপাধ্যায় বললেন, "আমাদের মাকে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। পাঁচরকমের মাছ দেওয়া হয়। দুর্গাপুজো মানে উৎসব, সব সম্প্রদায়ের মানুষই এতে অংশ নেন। আমার মনে হয়, বাঙালি জীবনে দুর্গাপুজো ধর্মীয় আচরণের থেকে বেশি সামাজিক উৎসব। পুজোর পেটপুজোর সঙ্গে ধর্মীয় আচরণের কোনও সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। পুজোয় তো সবথেকে বেশি বিরিয়ানি বিক্রি হয়। আমার খুব বিরক্ত লাগছে, হিন্দু ধর্ম সংকীর্ণ মানসিকতার ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্ম শুধুমাত্র কয়েকটা ধর্মীয় আচরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।"

আরও পড়ুন, পুজোয় পেটপুজো: কাবাব, বিরিয়ানির স্বাদে পুজোর পসরা সাজিয়েছে আওধ ১৫৯০

খাবার নিয়ে বিতর্কের কথা বলতে গিয়ে ফুড ব্লগার ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ি বললেন, "এই বোকামোর কোনও মানে হয় না। ধর্ম সবার নিজস্ব। উত্তর ভারতে নবরাত্রির সময় নিরামিষ খাবার খান। বাঙালিদের কাছে দুর্গাপুজো মানে মেয়ে ঘরে আসছে, সেটাকে সেলিব্রেট করা। সেলিব্রেশনের সময় আমরা আমিষ পদই খাই। তাছাড়া যাঁদের ইচ্ছে আমিষ পদ খাবেন, আর যাঁদের ইচ্ছে নেই, তাঁরা খাবেন না। ফলে দেশের একপ্রান্তের নবরাত্রির সঙ্গে আরেক প্রান্তের দুর্গাপুজোকে এভাবে মেলানো ঠিক নয়। একটা ব্র্যান্ড যে কেন একটা গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অন্য গোষ্ঠীর ভাবাবেগে আঘাত করবে, সেটা আমার বোধবুদ্ধির বাইরে।"

খাবারের বিজ্ঞাপন বিতর্ক প্রসঙ্গে ভজহরি মান্না রেস্তোরাঁর ক্যাটারিং ম্যানেজার মানিক দাস বললেন, "এমন বিজ্ঞাপন করতেই পারে। তাতে তো কোনও অসুবিধে নেই। পুজোর ক’দিন আমরা পেটপুরে খাব। কেউ জোর করে বলবে আমরা নিরামিষ খাব, এটা হতে পারে নাকি?" তবে অন্য সুর শোনা গেল কলকাতার এক শেফের গলায়। পুজোর ক’টা দিন নিরামিষ খাবারকেই প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে ওহ! ক্যালকাটা রেস্তোঁরার শেফ সুবীর কর দেব। তিনি বললেন, "সত্যিই, পুজোতে আমরা হিন্দুরা নিরামিষ খাবারের ওপরেই তো জোর দিই, আমিষ খাবার কিন্তু করি না। ধর্মীয় দিক থেকে দেখলে, সেখানে পুজোর সময় আমরা নন-ভেজ খাই না।"

kolkata news Durga Puja 2019
Advertisment