বন্ধুত্বের কোনও নির্দিষ্ট দিন হয় না! হয় না কোনও আলাদা পরিচয়। বন্ধু মানে নিঃস্বার্থ ভাবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি। পৃথিবীর একমাত্র সম্পর্ক, যাতে দেনা পাওনার কোনও চান্স নেই। নেই কোনও জাজমেন্ট, শুধু একরাশ বিশ্বাস আর প্রাণখোলা আনন্দ! আজ নাকি বন্ধুত্বের দিবস! আগস্টের প্রথম রবিবারই ফ্রেন্ডশিপ ডে বলে ধরে নেওয়া হয়। ছোট থেকে খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি, পড়াশোনা আর স্কুলের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে প্ল্যান হয় ফ্রেন্ডস্ ট্রিপের! নিজেদের পছন্দের জায়গা সঙ্গে সবচেয়ে প্রিয় কিছু মানুষজন। রেলগাড়ির কামরা, হিল স্টেশন আর বন্ধুর দল এই অনুভূতি যেন এক আলাদা রকম নস্টালজিয়া!
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর সবারই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান কিন্তু অবশ্যই থাকে। পাহাড় থেকে জঙ্গল, রোমাঞ্চ আর দুর রাস্তার প্রতিটা মুহূর্তে “ইয়ে দোস্তি হুম নেহি তোরেঙ্গে” মিশে যায় বন্ধু নামের প্রতিটা শব্দে!! নিজেদের ভ্রমণের লিস্ট তো তৈরি, কিন্তু ট্রাভেল গাইডে এই জায়গাগুলো বন্ধুদের সঙ্গে উপভোগ করতে একদম ভুলবেন না ! বুকিং ডট কম, একটি ডিজিটাল ট্রাভেল কোম্পানি, আপনার এবং আপনার বন্ধুদের জন্য আয়োজন করেছে এমন কিছু জায়গায়, যেগুলি একটু কম পরিচিত তবে আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তাহলে চটজলদি মাস্ক নিন, আপনার পছন্দের প্লে-লিস্ট তৈরি করুন এবং আপনার বন্ধুদের সঙ্গে একটি মজাদার এবং স্মরণীয় ভ্রমণের জন্য বেড়িয়ে পড়ুন।
• মুম্বই থেকে তিরাকোল: মুম্বাই থেকে তেরখোল নদীর কাছে একটি ছোট্ট অদ্ভুত গ্রাম তিরাকোল। আপনাদের সকলকেই মুগ্ধ করবে। এমন একটি রাস্তা বেছে নিন যেটি সহজেই পৌঁছে দেবে আপনার গন্তব্যে। মহাসাগরী মার্গ (মহারাষ্ট্র রাজ্যের উপকূলীয় মহাসড়ক) দিয়ে যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক উপকূলীয় ড্রাইভ অবশ্যই উপভোগ করুন। পথে, আপনি কিছু সুন্দর গন্তব্য দেখতে পাবেন যেমন আলিবাগ, রত্নগিরি, তরকালি, সামুদ্রিক দৃশ্য একেবারে ফাটাফাটি। যাত্রা দীর্ঘ, কিন্তু পথে আপনি ধাবা পাবেন যেখানে খাঁটি মহারাষ্ট্রীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। সুতরাং পেট পুজোর কোনও চিন্তা নেই।
• দিল্লি থেকে বাদখাল: ফরিদাবাদের কাছাকাছি অবস্থিত একটি গ্রাম বাদখাল। যাঁরা ছুটি কাটানোর জায়গা খুঁজছেন তাঁদের জন্য একদম পারফেক্ট। এটি দিল্লি থেকে ৫৭.৭ কিমি দূরে অবস্থিত। বন্ধুদের সঙ্গে রোড ট্রিপের জন্য একটি দারুণ গন্তব্য। দ্রুততম রুট মহাত্মা গান্ধী মার্গের মধ্য দিয়ে, যদিও বিনা বাধায় যাত্রা নিশ্চিত করতে ভ্রমণকারীদের স্থানীয় রাজ্য কোভিড বিধিনিষেধ বিবেচনা করতে হতে পারে। একবার বাদখালে পৌঁছালে মরুভূমির দেশে আপনার স্বাগতম। বাদখালের একটি হ্রদ রয়েছে যা একটি শান্ত ক্যাম্পিং স্পট হিসেবেই পর্যটকরা উপভোগ করেন। ক্যাম্প ফায়ার সাথে আড্ডা, গান, গল্প, আর ট্রেকিং প্ল্যান একদম সর্টেড।
• কলকাতা থেকে মন্দারমণি: মন্দারমণি একটি সমুদ্রতীরবর্তী গ্রাম। আপনি এবং আপনার বন্ধুরা যদি একটি আরামদায়ক অবকাশ চান, তাহলে মন্দারমণি শীর্ষ-অনুমোদিত গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি। কলকাতা থেকে শুরু করে, ১৮০ কিলোমিটার পথ আপনাকে গ্রাম বাংলার চমৎকার দৃশ্যের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে সমুদ্র সৈকতে। মন্দারমণিতে বেশ কয়েকটি থাকার জায়গাও রয়েছে। হোটেল ছাড়াও কটেজ ব্যবস্থাও পেয়ে যাবেন। যদি আপনি এবং আপনার বন্ধুরা কিছু অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছায় থাকেন, তাহলে সমুদ্র সৈকতে জেট স্কি রাইড, নৌকা ভ্রমণ (banana boat ride) এবং প্যারাশ্যুট রাইডে দারুণ অনুভুতি দেবে।
• চেন্নাই থেকে ইয়েলাগিরি: ইয়েলাগিরি তামিলনাড়ুর একটি ছোট হিল স্টেশন। দুটি পথের মাধ্যমে পৌঁছনো যায়- হয় কাঞ্চিপুরম নয়তো ভেলোর হয়ে। উভয় রুটই সবুজায়ন, জলপ্রপাত এবং পাহাড়ের সঙ্গে তাদের প্রকৃতি পথের জন্য পরিচিত। রুটটিতে আপনার ঘোড়ার চড়ার দক্ষতা দেখতে পারেন, পথে বেশ কয়েকটি হেয়ারপিন বাঁক রয়েছে, তাই নিরাপত্তার কারণে হেঁটে যাওয়া ভাল। ইয়েলাগিরিতে পৌঁছে গেলে দেখতে পাবেন মনুষ্যসৃষ্ট হ্রদ, পুংগানুর হ্রদ। বন্ধুদের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন অথবা পাহাড়ের মাঝে কিছু সময় কাটান।
• বেঙ্গালুরু থেকে মান্দারা গিরি: মান্দারা গিরি পাহাড় বা মন্দারগিরি বেট্টা বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। এটি কর্ণাটকের টুমকুর জেলার একটি ছোট টিলা যা রক্ষণাবেক্ষণের আওতায়। মন্দারগিরি বেট্টায় পৌঁছানোর পর, আপনি খাঁটি কন্নড় ধাঁচের খাবারের স্বাদ পাবেন এবং দিগম্বর জৈনের ঐতিহ্য কেন্দ্র নামক অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনাও দেখতে পারেন। এই হলটি একটি ময়ূরের পালকের আদলে তৈরি, যার মাঝখানে সাধকের একটি সাধারণ মূর্তি রয়েছে। এক কথায় ঐতিহাসিক এই স্থান আপনার লিস্টে থাকা একদম উচিত।
• আহমেদাবাদ থেকে তানোট: আপনি কি দুঃসাহসিক রোড ট্রিপের প্ল্যান করছেন? তাহলে আহমেদাবাদ থেকে তনোটের পথ একদম পারফেক্ট। থর মরুভূমিতে ৬৫৭ কিমি ড্রাইভ, এই রুটটি আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ১২ ঘন্টা। পথে, আপনি কিছু সুন্দর শহর এবং থারাড, বারমের, জয়সলমের এবং রামগড় গ্রামের মধ্য দিয়ে যাবেন যেখানে আপনি স্থানীয় সংস্কৃতি অনুভব করতে পারবেন। একবার আপনি গন্তব্যে পৌঁছে গেলে, কিছু স্থানীয় খাবার এবং সুস্বাদু দুগ্ধ ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হবেন। তানোট মাতা মন্দির হল একটি দর্শনীয় গন্তব্য যা রাজস্থানের লঙ্গেওয়ালা সীমান্ত চৌকির কাছাকাছি অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে এটি পরিচিত।
আরও পড়ুন তেলেঙ্গানার রামাপ্পা মন্দিরকে World Heritage Site ঘোষণা ইউনেস্কোর
• দার্জিলিং থেকে পেলিং: এই সৌন্দর্য হার মানায় সবকিছুকেই! পাহাড়, জলপ্রপাত, চারিদিকে কুয়াশায় মোড়া শহর। সঙ্গে চায়ের মিষ্টি সুবাস! বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর টিপ টিপ বৃষ্টি। রাস্তার দূরত্ব প্রায় ৭৪ কিলোমিটার! কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশে পেলিংয়ের সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করা বেশ মুশকিল। খেছুপেরি লেক, পেলিং স্কিওয়াক সঙ্গে অজস্র গোলাপের সম্ভার! এই শহর আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
তাহলে, ব্যাগ গুছিয়ে হট করে, ছোট্ট একটা ট্রিপ হয়ে যাক?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন