বীরাষ্টমী থেকে কুমারী পুজো। সঙ্গে দেবীর কাছে অঞ্জলি। রবিবার নানাভাবে মহাষ্টমী পালন করল বাংলা। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ছিল সকালের পুজোর সময়। পঞ্জিকাভেদে অবশ্য সময়ের সামান্য হেরফের ছিল। যাঁরা যে পঞ্জিকা মেলে চলেন, সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একের পর এক মণ্ডপে দেবী মহাগৌরীর উদ্দেশ্যে মহাষ্টমীর অঞ্জলি দিলেন ভক্তরা। রাজ্যের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বরানগরে ওঙ্কারনাথ মিশনের মহামিলন মঠেও পুষ্পাঞ্জলি দিলেন অগণিত ভক্ত ও শিষ্যরা।
বেলুড় মঠে কুমারী পুজো
দেবী সারদার উপস্থিতিতে ১৯০১ সালে ৯ জন কুমারীকে স্বামী বিবেকানন্দ পুজো করেছিলেন। সেই থেকে বেলুড় মঠে কুমারী পুজো চলে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তন্ত্রে কুমারীকে যোগিনী রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের ইচ্ছা অনুসারে এখানে দেবী সারদার নামেই পুজো হয়। শুধু বেলুড় মঠেই নয়। বাঁকুড়ার জয়রামবাটি মাতৃমন্দিরেও রবিবার পালিত হল কুমারী পুজো। বাঁকুড়ার জয়রামবাটি সারদা মায়ের জন্মভিটে। সেখানে তিথি মেনে সকাল ৯টায় শুরু হয় কুমারী পুজো। জেলার কোতুলপুরের বাসিন্দা সাড়ে ৫ বছরের তুহিনা ভট্টাচার্যকে কোলে করে মণ্ডপে নিয়ে এসেছিলেন আশ্রমের মহারাজরা। তাঁকেই শাস্ত্রমতে কুমারীদেবী জ্ঞানে আরাধনা করা হল। পাশাপাশি, ভবানীপুরে মল্লিক বাড়ি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মহাষ্টমীতে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- অষ্টমীর পূজা: কীভাবে দেবী হলেন মহাগৌরী? এই রূপের উপাসনায় কী লাভ?
অস্ত্রপূজন
দেবী মহাগৌরী যুদ্ধের দেবী। তিনি অসুরদলনী। সেই কথা মাথায় রেখে অস্ত্রকলা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেবী পূজনের প্রথাও প্রচলিত আছে বিভিন্ন জায়গায়। যার অন্যতম বাগবাজার সর্বজনীন। এবার এখানকার পুজো ১০৫ বছরে পা দিল। সাবেকিয়ানা বা ঐতিহ্য এখানকার পুজোর বৈশিষ্ট্য। ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। এই পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হিন্দুধর্মের শক্তি আরাধনা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। যার অঙ্গ ছিল লাঠিখেলা, তরোয়াল খেলা এবং কুস্তি। বাগবাজার সর্বজনীন সেই ধারা মেনেই বীরাষ্টমীর আয়োজন করে থাকে। এর পাশাপাশি, ভারত সেবাশ্রম সংঘেও দুর্গাপুজোয় অস্ত্রের আরাধনা বহুদিন ধরেই প্রচলিত। এখানে দেবীকে সন্ন্যাসীরাই অস্ত্র আরতির মাধ্যমে উপাসনা করেন। এবারও সেই রীতি পালিত হয়েছে।