Chrismas and township Churches: একেবারেই বছরের অন্তিম প্রহর। চারিদিকে যিশু বন্দনার আমেজ। কেকের বহর, আর ক্রিসমাস ট্রি থেকে ডেকরেশনের সামগ্রী - জমকালো শীতের আমেজে ক্রিসমাসের আগেই কিন্তু শহরতলির চার্চগুলি সেজে উঠছে নিজেদের মতো করেই। সারাবছর এক রকম, তবে এই দিন বছরের অন্যতম প্রিয় উৎসবের আবহে তাদের আনন্দ যেন বাঁধ মানে না। এমনকি আমাদের অনেকের মধ্যেই যিশু প্রেম কিন্তু সবসময় থাকে। তাই পুজোর এই পূণ্যলগ্ন তো বটেই তবে শীতের আনন্দ উপভোগ করতে নিজেরাও কিন্তু শহরতলির এই চার্চগুলি ঘুরে আসতে পারেন।
প্রথমেই, পশ্চিমবাংলার মধ্যেই চার্চের কথা মনে করতেই ব্যান্ডেল চার্চের প্রসঙ্গ আসবে না এটি কিন্তু হতে পারে না। দূর দূরান্ত তো বটেই, তবে অন্য রাজ্য থেকেও যিশু আরাধনার সঙ্গে সঙ্গে এখানে আসেন মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে। ১৫৯৯ সাল থেকে এই চার্চ স্বমহিমায় এখনও নিজের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। কথায় বলে, মন থেকে চাইলে এখানে সব ইচ্ছে পূরণ হয়। বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে মোমবাতি জ্বালানোর স্ট্যান্ড এবং মেরিমাতার প্রতি ভক্তি তথা শ্রদ্ধা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে রয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ! এখানে প্রার্থনা হলে কথা বলা বারণ, জুতো পরে ঢোকা বর্তমানে নিষেধ। সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে ভ্রমণ। তবে ২৫ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি চার্চের অন্দরে থাকে প্রবেশ নিষেধ। বাইরের মাঠ এবং গঙ্গার ধারে মেলায় আপনি ঘুরতে যেতেই পারেন।
চার্চ অফ স্কটল্যান্ড দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি চার্চ হল চুঁচুড়া শহরের অন্যতম পুরনো চার্চ চুঁচুড়া ডাচ চার্চ, যদিও বর্তমান সময়ে এটি লোকমুখে চুঁচুড়া চার্চ নামেই পরিচিত। আকারে বেশ ছোট তবে নিখুঁত ভাবে যত্ন নেন সকলেই। চার্চের অন্দরে ছোট্ট একটি প্রার্থনা গৃহ, তবে রয়েছে বেশ সুন্দর এটি ইতিহাস। ফাদার রেভারেন্ড সেবাস্টিয়ান হাঁসদা বলেন, আগে এটি অস্ত্রাগার ছিল। সিপাহীদের নানান অস্ত্র থাকত। তবে ভগবান যিশুর উপাসনার কারণে এক্কেবারে ছোট দেখেই এই চার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যথাসম্ভব লোকচক্ষুর আড়ালে এই চার্চ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তবে আজও বড়দিন এলেই সাজিয়ে তোলা হয় ১৮২৫ সালে তৈরি এই গির্জা। রবিবার সকাল ৯ টা-১১ টা পর্যন্ত ভক্তদের জন্য খোলা থাকে চার্চের দরজা। ফাদার বলেন, প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে ক্রশ একমাত্র উপাসনার কারণ, তাই এখানে আরাধ্য দেবতার স্থানে ক্রশ পবিত্রতার প্রতীক।
চন্দননগরের সেক্রেড হার্ট ক্যাথলিক চার্চ, অনেকেই জানেন আবার অনেকেই না। যাঁরা মোটামুটি চন্দননগর এসেছেন তাঁদের এটি বেশ পরিচিত জায়গা। এই চার্চ সম্পর্কে অনেকেই বেশ আগ্রহী, কারণ বহু মানুষ এইস্থানে এসেও ফিরে গেছেন যিশু দর্শন না করেই। এক চার্চ সদস্য জানিয়েছেন, ২৪ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকেই প্রার্থনা শুরু হবে - সেইমুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পারেন ইচ্ছুক সকলেই। পরেরদিন সকাল ৮টায় ফের প্রার্থনা এবং সারাবছরের জন্য বৃহস্পতি থেকে রবি, চারদিন বিশেষ প্রার্থনা করা হয় বিকেল পাঁচটায়, তারপর থেকে দর্শনার্থীরা চার্চের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন।
শ্রীরামপুরের সেন্ট অলাভ চার্চের অন্দরে যেন সর্বদা শান্তি বিরাজমান। একেবারে আড়ম্বরহীন, আর ড্যানিশ আলোক সজ্জায় এই চার্চ আপনার মন জয় করবে। সম্পূর্ণ হলঘর জুড়ে সুন্দর আলো, ক্রিসমাস বেল, ট্রি দিয়েই সাজানো। ঢুকতেই দেখতে পাবেন, একটি ফোয়ারার ন্যায় স্তম্ভ। তবে বলে রাখা ভাল, এটি সুদূর ডেনমার্ক থেকে আনা 'হোলি ওয়াটার' ফাউন্টেন - তাদের মতে এখানে সৌভাগ্য বিরাজ করে। ২৫ ডিসেম্বর সারাদিন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা, রাত্রি ৮ টা পর্যন্ত। তবে বর্তমান সময়কে মাথায় রেখেই চার্চ সাধারণ দিনে খোলা থাকছে না। বলাই বাহুল্য, এনারাও প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শী।
সর্বশেষ, শ্রীরামপুরের আরেকটি ইম্যাকুলেট কন্সেপশন চার্চ। ছোট আয়তনে, সুন্দর পরিবেশে এই চার্চ বড়দিনের আগেই সেজে ওঠে নিজের মতো করে। সযত্নে এখনকার মানুষজনের সহযোগিতায় যিশু আরাধনায় খামতি থাকে না একেবারেই। বড়দিন উপলক্ষে আপনি গির্জায় প্রবেশ করতে পারেন সকাল থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। তবে সাধারণ দিনে গেলেও, নিজেদের মধ্যে শান্তি রাখলেই ভাল বলে জানিয়েছেন ফাদার। বলেন, পবিত্রতা বজায় রাখাই কর্তব্য।
তাহলে বড়দিন অথবা নতুন বছরের শুরু, নিজেদের ধারে কাছের মধ্যে এই চার্চগুলো আপনার বাকেট লিস্টে থাকা চাই-ই!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন