ইতিহাস প্রসিদ্ধ সময় থেকে গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের আরাধ্যা দেবী গন্ধেশ্বরী। যিনি আসলে দেবী দুর্গারই ভিন্নরূপ। সাজাগোজার জিনিসপত্র, ধূপ, চন্দন কাঠ, সিঁদুর, নানারকম মশলা- এই সব দ্রব্য সুদূর অতীত থেকে বেচাকেনা করে গন্ধবণিক সম্প্রদায়। পরবর্তীতে ওষুধ, বারুদ এমনকী অস্ত্রও সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের ধারণা, দেবীর কৃপায় তাঁদের ব্যবসায়ের উন্নতি ঘটে। দেবী গন্ধেশ্বরীই তাঁদের ব্যবসাকে রক্ষা করেন।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গন্ধেশ্বরী দেবীর পুজো আয়োজনে তাই মোটেও খামতি নেই। তবে, সেই পুজোর সবটাই হয় ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর বাড়িতে। শহর কলকাতায় কিন্তু, গন্ধেশ্বরী দেবীর মন্দির রয়েছে। রীতিমতো স্থায়ী মন্দির। যেখানে দেবী গন্ধেশ্বরীর নিত্যপুজো হয়। পাশাপাশি, বৈশাখ মাসে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন গন্ধেশ্বরী মাতার বিশেষ পুজো হয় এই মন্দিরে।
এই মন্দির আছে ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের কাছেই। যার ঠিকানা- ২১সি রাজেন্দ্র দেব লেন। মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। মন্দিরের চেয়েও একে ছোট একটা ঘর বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। মন্দিরের সামনে নাটমন্দির। গর্ভগৃহে রয়েছে দেবী গন্ধেশ্বরীর অষ্টধাতুর মূর্তি। দেবী সিংহাসনা, চতুর্ভুজা। যিনি ত্রিশূল হাতে বধ করছেন গন্ধাসুরকে। মন্দিরের সামনে আবার রয়েছে নাটমন্দির।
আরও পড়ুন- জাগ্রত দেবতা ভূতনাথ, যাঁর দর্শনে ভিড় করেন কলকাতা, জেলা এমনকী ভিনরাজ্যের ভক্তরাও
দেবী গন্ধেশ্বরীর পুজোর দিন শহর কলকাতার গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের মানুষজন এখানে উপস্থিত হন। তাঁরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন, পুজো দেন। বছরভরের ব্যবসার সমৃদ্ধি প্রার্থনা করে দেবীর আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। এই মন্দিরে বিশেষ পুজোর দিন দেবীকে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়। মন্দিরে আসা ভক্তরাও সেই প্রসাদই পেয়ে থাকেন।
এই মন্দির তৈরি হয়েছিল ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গন্ধবণিক মহাসভার তৎকালীন সভাপতি নৃত্যগোপাল রুদ্র। মন্দিরের বাইরের দেওয়ালের ফলকে সেকথা লেখাও আছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা। আর, সন্ধে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। কলকাতায় কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে বিধান সরণি ধরে শ্যামবাজারের দিকে একটা স্টপেজ পরেই ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। এই মন্দিরের দক্ষিণ দিকের রাস্তা রাজেন্দ্র দেব লেন। সেই পথ ধরে খানিকটা এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে গন্ধেশ্বরী দেবীর মন্দির।