বাংলা সিরিয়ালের দৌলতে দেবী ঘোমটা কালীর নাম এখন অনেকেই জানেন। অনেকের ধারণা, এই দেবী বোধহয় নিছকই কল্পনা। কিন্তু, না। দেবী ঘোমটা কালীর মন্দির রয়েছে শহর কলকাতার বুকে। সাধারণত, কালী ঠাকুরের এলোকেশী রূপ দেখেই ভক্তরা অভ্যস্ত। কিন্তু, দেবী ঘোমটা কালীর মূর্তিটি অন্যরকম। এখানে কালীর ঘোমটা দেওয়া মূর্তি।
শহর কলকাতায় ঘোমটা কালীর একমাত্র মূর্তি রয়েছে বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ ধরে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ। এই কলেজের বিপরীত দিকে শ্যামবাজার স্ট্রিট। সেই গলি থেকে কয়েক পা এগোলেই পৌঁছে যাবেন শ্যামপুকুর থানা। থানার সামনে বলরাম ঘোষ স্ট্রিট। যার ডান দিকে দেবী ঘোমটা কালীর মন্দির।
মন্দিরটি ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের (১২৯৫ বঙ্গাব্দ)। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ঘোমটা কালী নামে পরিচিত হলেও, সাধকদের কাছে এই দেবী দক্ষিণাকালীরই ভিন্নরূপ। আবার, বহু সাধক এই দেবীকে বলেন ভবতারিণী। দক্ষিণেশ্বরের পাশাপাশি, তাই কলকাতার বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে রয়েছে ভবতারিণীর মূর্তি।
আরও পড়ুন- সমস্যায় মেলে নিস্তার, বহু পরিবারই পুরুষানুক্রমে বিপদে ছুটে আসে নিস্তারিণী মন্দিরে
কথিত আছে দেবী স্বপ্নে বলরাম ঘোষের উত্তরসূরি তুলসীরাম ঘোষকে দেখা দিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নে দেখা মূর্তিকে মাথায় রেখেই ঘোমটা কালীর মূর্তি তৈরি হয়েছে। নিত্য পুজো তো হয়ই। পাশাপাশি, এখানে শ্যামাপুজোর দিন ধূমধাম করে পুজো হয়। জন্মাষ্টমী, চাঁচর, দুর্গাপুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজোও হয়ে থাকে। এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাসন্তী পঞ্চমীর দিন। সেই কারণে, বাসন্তী পঞ্চমীর দিনও হয় ধূমধাম করে পুজো। এছাড়া প্রত্যেক অমাবস্যায় হোমযজ্ঞের আয়োজন থাকে। দেবীকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় নুন ছাড়া লুচি, পাঁচ রকমের ভাজা, বোঁদে, মিষ্টি।
এই মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী ঘোমটা কালীর মূর্তি ছাড়াও রয়েছে নারায়ণ শিলা, রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি, একটি কৃষ্ণমূর্তি। মন্দিরের দু'পাশে আছে দুটি আটচালা শিব মন্দির। সেখানে পূজিত হন হরেশ্বর এবং হরপ্রসন্ন নামে দুটি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ। স্থানীয় বাসিন্দারা বিপদে-আপদে এই মন্দিরে ছুটে আসেন। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী ঘোমটাকালীর কৃপায় মেলে পরিত্রাণের উপায়।