অনেকে বলেন ছোট দক্ষিণেশ্বর। কিন্তু, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মূল দেবতা দেবী দক্ষিণকালী। এখানে কিন্তু, মূল দেবতা রাধাগোবিন্দ জিউ। এই মন্দিরটির সঙ্গে অবশ্য দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আরও একটি যোগসূত্র রয়েছে। তা হল, দক্ষিণেশ্বর মন্দির যিনি তৈরি করিয়েছিলেন তিনি রানি রাসমণি। আর, এই মন্দিরটি যিনি তৈরি করিয়েছিলেন, তিনি সেই রানি রাসমণির নাতবউ। জানবাজারের গোপালকৃষ্ণ দাসের বিধবা স্ত্রী গিরিবালা দাসী।
মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল ১৩১৮ সালের ১৮ জ্যৈষ্ঠ। চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাঙ্গণের মধ্যেখানে মন্দির। উঁচু বেদী। তার ওপর মন্দির। প্রবেশপথ তিনটি খিলানযুক্ত। এই মন্দির দক্ষিণমুখী। মন্দিরে ওঠার সিঁড়ির দু'পাশে পাথরের দুটি নারীর মূর্তি। যাদের হাতে রয়েছে কাচের বাতিদান। মন্দিরের চারপাশে কার্নিসগুলো বাঁচানো। মন্দিরের পশ্চিম দিকে রয়েছে গিরিবালা ঘাট। রয়েছে নহবতখানা এবং নাটমন্দিরও। এই মন্দির তৈরি করতে সেই সময় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচা হয়েছিল।
মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে কষ্টিপাথরের কৃষ্ণ। সঙ্গে রয়েছে অষ্টধাতুর রাধা। এছাড়া রয়েছে গণেশ, নারায়ণ শিলা ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি। এখানে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই মন্দির তৈরির সময় রাধারানির মূর্তিটি চুরি হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি, গিরিবালা দেবীর উত্তরসূরিরা ভোলানন্দ গিরি আশ্রমের হাতে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেয়। স্বামী শিবানন্দ গিরি বৃন্দাবন থেকে অষ্টধাতুর রাধার মূর্তি এনেছিল। সেই মূর্তিটি বর্তমানে এই মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন- ভক্তদের কথায় জাগ্রত, ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল পর্যন্ত সস্ত্রীক এসেছিলেন মন্দির দর্শনে
মন্দিরে প্রতিষ্ঠা উৎসব, রাধাষ্টমী, জন্মাষ্টমী, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা, ঝুলন, রাসযাত্রার মত বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। শিবরাত্রির দিন সারারাত এখানকার শিবমন্দিরগুলোতে পুজো হয়। এখানকার প্রাঙ্গণের পশ্চিম ছয়টি শিবমন্দির আছে। মন্দিরগুলোর নাম হল- রামেশ্বর, রাজেশ্বর, গোপেশ্বর, তারকেশ্বর, ভুবনেশ্বর এবং গিরিশ্বর শিবলিঙ্গের মন্দির। এই মন্দিরে যেতে হলে ধরতে হবে বিটি রোড বা ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড। নামতে হবে আগরপাড়ার মোল্লার হাটের মোড়ে। সেখান থেকে হলধর বসু রোড ধরে হাঁটতে হবে গঙ্গার দিকে। পথে পড়বে গিরিবালা ঠাকুরবাড়ি।