বাংলার কালী মন্দিরগুলোর সঙ্গে ডাকাতদের একটা সম্পর্ক ছিল। সব কালী মন্দিরের সঙ্গে না-হলেও, বহু কালী মন্দিরেরই অতীত খুঁড়লে দেখা যাবে, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডাকাতদের একটা যোগাযোগ। সেই সময়ে দেবী কালীর পুজো না-করে বাংলার ডাকাতদের অনেকেই ডাকাতি করতে যেত না। এমনই এক ঐতিহাসিক কালীমন্দির রয়েছে মালদায়। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ও নানা কাহিনি। বহু ভক্ত আবার এই মন্দিরে অলৌকিকত্ব খুঁজে পাওয়ায়, তা হয়ে দাঁড়িয়েছে সব ধর্মের ভক্তের মিলনস্থল।
এই বিখ্যাত কালী মন্দির রয়েছে মালদার গোবরজনায়। মালদা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পুকুরিয়া থানার আড়াইডাঙা এলাকা। তার এক গ্রাম গোবরজনা। গ্রামীণ এলাকায় হওয়ায় প্রচারের আলো থেকেও বেশ দূরে এই কালীমন্দির। তবে, এই মন্দির অত্যন্ত প্রাচীন, প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। দেড় বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই মন্দির। প্রচারের আলো থেকে দূরে হলেও এর জাঁকজমকে কিন্তু আজও ভাটা পড়েনি। প্রত্যেক কার্তিক অমাবস্যা তিথিতে এখানে রীতিমতো ধূমধাম করে দেবীর আরাধনা হয়।
আরও পড়ুন- বারাসতের ডাকাত কালী, অত্যন্ত জাগ্রত এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রঘু ডাকাতের নাম
কথিত আছে ডাকাত সর্দার ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানি এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিন্দী নদী বেয়ে বজরায় চেপে যাচ্ছিলেন। সেই সময় নদীতে তাঁদের বজরা আটকে পড়েছিল। তাই গোবরজনা কালী মন্দিরে তাঁরা রাত্রিযাপন করেছিলেন। দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে তাঁর পুজোও দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই পুজোকে ভবানী পাঠকের পুজো বলা হয়। সেই ভবানী পাঠকের বংশধররা বর্তমানে বংশপরম্পরায় এখানে দেবী কালীর পুজো করে আসছেন বলে কথিত আছে। এখানে কার্তিক অমাবস্যায় বিশেষ পুজোর পর পাশের কালিন্দী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
কালীপুজোর সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভক্ত এখানে আসেন। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় পুজোর দু'দিন মেলায় আয়োজন করা হয়। বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমাগম হওয়ায় ব্যাপক পুলিশ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থাকে এখানে। পাশাপাশি, শনি ও মঙ্গলবারও এখানে পুজোর আয়োজন হয়।