দেবী অপরাজিতা। যিনি দেবী আদিশক্তিরই এক অন্য রূপ। স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র দেবী অপরাজিতার পূজো প্রথম প্রচলন করেছিলেন বলে কথিত আছে। শত্রুকে দমনের জন্য এই দেবীরই আরাধনা করেন ভক্তরা। দেবী দুর্গার বিসর্জনের ঠিক পরেই শুরু হয় তাঁর পুজো। কিন্তু, খুব কমজনেই জানেন দেবী অপরাজিতার পুজোর কথা। কেবল পুরোহিতরা চুপচাপ দুর্গাপুজো শেষে দেবী অপরাজিতার পুজো করে দেন।
দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পরই হয় দেবী অপরাজিতার বোধন হয়। দুর্গাপুজোর দশমীতে তাই সাদা আর নীল রঙের অপরাজিতা লাগে। নীল অপরাজিতা ফুলের মালা পরানো হয় দেবীকে। তবে, বারোয়ারি পুজোর ক্ষেত্রে নীল অপরাজিতার মালা জোগাড় করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রে এই রীতি অক্ষরে অক্ষরে মানা হয়।
কারণ, দেবী অপরাজিতা হলেন দেবী দুর্গারই এক রূপ। মূলত সাদা অপরাজিতা গাছকেই দেবী রূপে কল্পনা করে পুজো করা হয়। আগেকার দিনে সেজন্যই দশমীতে অপরাজিতা গাছের চারা রোপণ করা হত। লক্ষ্য ছিল- মঙ্গলকামনা। আর, যুদ্ধে জিতে বিজয়ী হওয়া। এই পুজোর শেষে ভক্তদের হাতে অপরাজিতা গাছের ডাল বেঁধে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- নবরাত্রির শেষ দিনে দেবী সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা, কী মেলে তাতে
সঙ্গে রয়েছে দেবী অপরাজিতার জন্য বিশেষ প্রার্থনা। যেই প্রার্থনায় দেবীর উদ্দেশ্যে বলা হয়, 'হে, দেবী অপরাজিতা! তুমি আমাকে সবসময় বিজয়ী করে দাও। আমার মঙ্গল এবং বিজয় লাভের জন্যই তোমাকে ডানহাতে ধারণ করছি। দেবী তুমি শত্রু দমন করে আমাকে সমৃদ্ধি এবং বিজয় দান কর। শ্রীরামচন্দ্র যেভাবে রাবণকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছিলেন, আমাকেও তুমি তেমনই বিজয় দান কর।'
কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, কোনও রাজা যদি দশমীর পরেই বিজয় যাত্রা শুরু করেন, তাহলে তাঁকে আর পরাজিত হতে হয় না। সেই কারণে, বিজয়লক্ষ্মী লাভের আশায় আগেকার দিনে রাজারা দশমীর পরের দিনই বিজয়যাত্রা করতেন। অপরাজিতা পুজোর পরই রওনা দিতেন যুদ্ধজয়ের উদ্দেশ্যে। পণ্ডিত রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্ব গ্রন্থেও রয়েছে অপরাজিতা পুজোর কথা।