পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল এলাকা বরাবরই শক্তিসাধনায় সমৃদ্ধ। এর মধ্যে বিশেষ নাম করেছিল ঝাড়গ্রাম। এর কাছেই রয়েছে চিল্কিগড়। সামন্তরাজার ছত্রছায়ায় যেখানে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত কনকদুর্গা মন্দির। জঙ্গলঘেরা গা-ছমছমে পরিবেশের মধ্যে তৈরি এই মন্দিরে একসময় চালু ছিল নরবলি প্রথা। মনে করা হয় প্রায় ৪৫০ বছর আগে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সামন্তরাজ গোপীনাথ সিংহ।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চিল্কিগড়। দেবীর মূর্তি অষ্টধাতুর অশ্বারোহিণী। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ডুংলি নদী। এখানে সাড়ম্বরে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে মহাষ্টমীর রাতে স্বয়ং দেবী দুর্গা নিজের হাতে ভোগ রান্না করেন। পূর্বমুখী এই মন্দিরে রয়েছে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। এগিয়ে গেলেই দেখা যায় পূর্বমুখী বারান্দা। মন্দিরের বাঁদিকে রয়েছে অতি প্রাচীন এক বটগাছ। যা থেকে নেমে আসা ঝুরিতে ভক্তরা ইচ্ছাপূরণের ডুরি বেঁধে যান।
আরও পড়ুন- মন্দির আকারে ছোট গুণে নয়, ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ করেন শনিদেব
এখানে ভোগের এক অদ্ভূত নিয়ম আছে। দেবীকে অন্নভোগের সঙ্গে দেওয়া হয় হাঁসের ডিম। গোড়া থেকেই এমনটা চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস দেবী কনকদুর্গা আমিষাশী। তাই তাঁকে হাঁসের ডিম দেওয়া হয়। এখানে কালিকা পুরাণ মতে দেবীর পূজা হয়। আজও এখানে পাঁঠাবলির চল রয়েছে। এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে গভীর জঙ্গল। সেখানে নিশাপূজায় অংশ নেন কেবল রাজ পরিবারের সদস্যরা।
মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্তের সময় ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দু'বার এখানকার মূর্তি চুরি গিয়েছিল। সেই সময় নতুন করে অষ্টধাতুর মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। এই মন্দির লাগোয়া বিশাল ভেষজের জঙ্গল রয়েছে। বর্তমানে সেই গাছের রক্ষণাবেক্ষণে রক্ষী রাখা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে চেকপোস্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে আপদে-বিপদে রক্ষা করেন দেবী কনকদুর্গা। শুধু তাই নয়। এই মন্দিরে এসে দেবী দর্শনের পর মনস্কামনা জানালে, তা-ও পূরণ করেন দেবী। আর, সেই কারণেই বটগাছের ঝুরিতে ওই ডুরি বেঁধে আসা। মনস্কামনা পূরণের পর খুলে দিতে হয় ডুরি। এটাই এখানকার নিয়ম।