দেবী নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ দেশী কাত্যায়নী। মহর্ষি কাত্যায়নের মেয়ে রূপে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই দেবীর নাম কাত্যায়নী। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে ভক্তরা দেবী কাত্যায়নীর আরাধনা করেন। যোগশাস্ত্র ও তন্ত্রমতে দেবী কাত্যায়নী আজ্ঞা চক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। আবার তন্ত্রমতে শিবের ছয় মুখের মধ্যে উত্তর মুখ থেকে উদ্ভব হয়েছে দেবী কাত্যায়নীর। কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে।
বামন পুরাণ মতে, দেবতারা চরম দুর্দশা কাটাতে বিষ্ণুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর দেবী পার্বতীর অংশ থেকে কাত্যায়নী রূপ তৈরি হয়। যাকে ধারণ করে জ্যোতিপর্বত। দেবী অষ্টাদশভূজা, কৃষ্ণকেশী, ত্রিনয়না ও সহস্র সূর্যের প্রভাযুক্তা। শিব তাঁকে ত্রিশূল দেন। বিষ্ণু দেন সুদর্শন চক্র। বরুণ দেন শঙ্খ, অগ্নি দেন শক্তি, বায়ু দেন ধনুক, সূর্য দেন তিরভরা তূণীর, ইন্দ্র দেন বজ্র, কুবের দেন গদা, ব্রহ্মা দেন অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, কাল দেন খড়্গ ও ঢাল, বিশ্বকর্মা দেন কুঠার ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র।
অস্ত্রসজ্জিতা দেবী যান বিন্ধ্যাচলে। সেখানে করার ও বিবকরার অসুররা তাঁকে দেখে রূপে মুগ্ধ হয়ে রাজা মহিষাসুরের কাছে দেবীর রূপ বর্ণনা করেন। মহিষাসুর দেবীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। দেবী জানান, তাঁকে যুদ্ধে হারাতে পারলে, তবেই তিনি মহিষাসুরকে বিয়ে করবেন। মহিষাসুর যুদ্ধ করতে এলে দেবী সিংহের পিঠে চেপে যুদ্ধ করেন। মহিষাসুর মহিষের রূপ ধরে দেবীকে আক্রমণ করলে, দেবী তাঁকে লাথি মারেন। দেবীর লাথির আঘাতে মহিষাসুর অচৈতন্য হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে, দেবী অসুরের মাথা ছিন্ন করেন। এইভাবে দেবী কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী নামে পরিচিত হন।
আরও পড়ুন- নবরাত্রির পঞ্চমীতে আরাধনা হয় দেবী স্কন্দমাতার, এই দেবীর আশীর্বাদে কী পান ভক্তরা?
কাশীর আত্মবীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহে মহিষাসুরমর্দিনী কাত্যায়নীর বিগ্রহ রয়েছে। অষ্টাদশভুজা মূর্তিটি কষ্টিপাথরের তৈরি। প্রায় একহাত লম্বা এই মূর্তি। এই মন্দিরের আত্মবীরেশ্বর শিবই দেবী কাত্যায়নীর ভৈরব। শরৎ ও বসন্তের নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে এই মন্দিরে দেবী কাত্যায়নীর পূজা করতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন। এই দেবীর আরাধনা করলে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ লাভ করা যায়। উপাসকের রোগ, শোক, ভয় দূর হয়। নষ্ট হয় জন্ম-জন্মান্তরের পাপও।
তবে নবরাত্রিতে প্রচলিত যে রূপে বিভিন্ন জায়গায় দেবী কাত্যায়নীর আরাধনা হয়, তা হল দেবী চতুর্ভুজা। তাঁর ডান হাতের একটিতে বর ও অন্যটিকে অভয়মুদ্রা। বাম হাতের একটিতে আছে পদ্ম, অন্যটিতে খড়্গ। দেবী পদ্মাসনে সিংহের ওপর বসে আছেন। তাঁর দেহের রং সোনার মত উজ্জ্বল।